Skip to main content

Armenian Church, Dhaka, Bangladesh.

 সূচনা: 

১৭৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত আর্মেনীয় গির্জা পুরান ঢাকার একটি প্রাচীন খ্রিস্টধর্মীয় উপাসনালয়।

 মোগল আমলের শেষদিকে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতকে ঢাকায় আসতে শুরু করেন আর্মেনিয়রা।

তারা যে স্থানে বসবাস করে সে স্থানের নাম হয় তাদের নামেই। টোলা বলতে সাধারণত বাসস্থান বোঝানো হয়। তাই তাদের বাসস্থান পরিচিতি লাভ করে আরমানিটোলা নামে। দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত ”কালের সাক্ষী পুরান ঢাকার আর্মেনিয়ান চার্চ” শিরোনামে বলা হয়েছে, “তাদের থাকার এই জায়গাটির নাম ব্রিটিশপূর্ব সময়ে ছিল ‘আলে আবু সাইদ’। সেটি পরিবর্তিত হয়ে আরমানিটোলা নামটিই স্থায়ী হয়।”


গির্জা নির্মাণের পূর্বে ঐ স্থানে ছিল আর্মেনীয়দের একটি কবরস্থান। গির্জা নির্মাণের জন্য কবরস্থানের আশেপাশে যে বিস্তৃত জমি তা দান করেছিলেন আগা মিনাস ক্যাটচিক নামের এক আর্মেনীয়। লোকশ্রুতি অনুযায়ী গীর্জাটি নির্মাণে সাহায্য করেছিলেন চারজন আর্মেনীয়। তারা হলেন মাইকেল সার্কিস, অকোটাভাটা সেতুর সিভর্গ, আগা এমনিয়াস এবং মার্কার পোগজ।

অবস্থান: ঢাকায় আরমানিয় গির্জার অবস্থান- পুরান ঢাকার বাবু বাজার ব্রিজ সংলগ্ন আরমানিটোলা রোডে। বাবু বাজার ব্রিজ থেকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে যাওয়ার পথে হাতের ডানদিকের রাস্তায় কিছুক্ষণ হাঁটলেই আরমানিয় গির্জার দেখা পাওয়া যায়।  যাতায়াতের জন্য আপনি রিকশা, সিএনজি ও ট্যাক্সি ব্যবহার করতে পারেন।


কবর:

গির্জাটির আশপাশজুড়ে রয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশ কবর।  কোনো কবরে ধর্মীয় বাণী, কোনোটায় হৃদয় ছোঁয়া বাণী, তো কোনোটিতে খোদিত রয়েছে ভালোবাসা প্রকাশক কবিতা। 


গেট থেকে প্রবেশের সময় হাতের বাম পাশে আপনি দেখতে পাবেন আর্মেনীয়দের বেশ কিছু ছবি ছবিতে আছে তাদের কর্মকান্ড, জনসেবা মূলক কাঝ তাদের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন এখান থেকে। এবং বেশ কিছু পেপার কার্টিং ও ধেখতে পাচ্ছি। যা তৎকালীন সময় প্রকাশিত হয়েছিল সেগুলোর পেপার কার্টিং এখানে আছে। তাদের সম্পর্কে জানতে পারবেন এই দেয়ালিকা থেকে। দেয়ালিকার পাশেই আছে প্রদর্শনী বই সেখানে সাইন করে ভিতরে প্রবেশ করি।


আলাদাভাবে নজর কাড়ে ক্যাটাভিক এভাটিক টমাসের কবর। এই কবরটিই এখানকার একমাত্র কবর, যাতে ওবেলিক রয়েছে। এই কবরটির ওপরে একটি মূর্তি স্থাপিত রয়েছে। কলকাতা থেকে সেটি কিনে এনেছিলেন টমাসের স্ত্রী। মূর্তিটি স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালোবাসার এক অনন্য নিদর্শন হয়ে রয়েছে। আরেকটি কবরে দেখা যায়, স্বামীর স্মৃতির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে স্ত্রীর ইংরেজি কবিতা।


বিবরণ:

গির্জাটি দৈর্ঘ্যে সাড়ে সাতশ ফুট। ২৭টি জানালা ও ৪ টি দরজা রয়েছে। এর পাশেই ছিল একটি ঘড়িঘর। এটি নির্মাণ করে দিয়েছিলেন জোহানস কারু পিয়েত সার্কিস। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ঘড়িঘরটি ভেঙে গিয়েছিল বলে জানা যায়। গির্জায় ছিল প্রকাণ্ড এক ঘণ্টা। জনশ্রুতি আছে, এই ঘণ্টা বাজার শব্দ নাকি শোনা যেত চার মাইল দূর থেকেও। ঘণ্টার শব্দ শুনেই নাকি অধিকাংশ ঢাকাবাসী নিজ নিজ সময় ঘড়ি ঠিক করে নিতেন। তবে ১৮৮০ সালে ঘণ্টাটি অকার্যকর হয়ে পড়ে।

গির্জার ভেতর দিয়ে ওপরে ওঠার জন্য তৈরি করা ঘোরানো কাঠের সিঁড়ি। গির্জার উত্তর ও দক্ষিণে রয়েছে লম্বা বারান্দা। গির্জার ভেতরে পাথরের নকশাখচিত ফলকের দেখা মেলে।


মাটি থেকে কয়েক ফুট ওপরে চার দেয়ালের মাঝে আছে একটি মার্বেল ফলক। এখানে আর্মেনিয় ও ইংরেজি ভাষায় রয়েছে উৎসর্গবাণী। এ থেকে জানা যায়, মিস্টার সার্কিস ঈশ্বরের উদ্দেশে এটি উৎসর্গ করেছেন। এই সার্কিসই সেই ব্যক্তি, যিনি চার্চের ঘণ্টা নির্মাণ করেছিলেন। 


ঢাকার আর্মেনীয় সম্প্রদায়:

পুরান ঢাকার ইতিহাসের সঙ্গে আরমানীয়রা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৮৭৫ সালে ঢাকা পৌরসভার নয়জন কমিশনারের ভেতর দুজন আর্মেনিয় স্থান পান।২ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে রয়েছে পোগজ স্কুল। ১৮৪৮ সালে এই পোগোজ স্কুলের প্রতিষ্ঠা করেন নিকোলাস পোগোজ বা নিকি পোগোজ, যিনি ছিলেন একজন আর্মেনীয় ব্যবসায়ী, জমিদার এবং ঢাকার একজন প্রভাবশালী নাগরিক। পোগোজ স্কুল প্রথম স্থাপিত হয় পোগোজের বাসার নিচতলায়। তখন স্কুলটির নাম ছিল পোগোজ অ্যাংলো-ভারনাকুলার স্কুল। বর্তমান বুলবুল ললিতকলা একাডেমি যে বাড়িতে তা ছিল জমিদার নিকি পোগজের। ঢাকায় আরমানীয়দের অনেকেরই জমিদারি ছিল, অনেকেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লবণ উৎপাদন ও বিতরণের ঠিকাদারি করতেন। উনিশ শতকে ঢাকায় প্রভাবশালী ও পরিচিত আর্মেনীয় পরিবারের মধ্যে পোগজ, আরাতুন, পানিয়াটি, কোজা, মাইকেল, মানুক, হার্নি এবং সার্কিস অন্যতম। ফরাসগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত রূপলাল হাউসটি ঢাকার বিখ্যাত আর্মেনীয় জমিদার আরাতুনের কাছ থেকে হিন্দু ব্যবসায়ী ভ্রাতৃদ্বয় রূপলাল দাস ও রঘুনাথ দাস বাড়িটি কিনে পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। এরপর বাড়িটির নাম দেয়া হয়েছিল রুপলাল হাউজ। এছাড়া মানুকের বাড়ি ছিল সদরঘাটে। আনন্দ রায় স্ট্রিটে ছিল স্টেফানের বাড়ি, তাজমহল সিনেমাহলে ছিল পানিয়াটির অট্টালিকা, বাবুবাজার পুলের উত্তর পশ্চিমে ছিল কাঁচাতুরের বাড়ি।  বর্তমানে পুরান ঢাকার অন্য স্থাপনার মত আর্মেনীয়দের ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে আছে আর্মেনীয় গির্জা। দুইশত বছরেরও বেশি সময়ের পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী আর্মেনীয় গির্জাটির রক্ষণাবেক্ষণ আর্মেনীয়রা করে থাকে। আপনি চাইলে ঘুরে আসতে পারেন আরমানীয় গির্জা থেকে।



তথ্যসূত্র:

১. (ডেইলি স্টার)- https://bangla.thedailystar.net/life-living/travel/news-539966

Comments