"তোমার নামের মতো আমার একটি নাম আছে। আমার নাম তৌফিকুর নূর। আমার বাবা চাকরি করেন। তিনি বৃহস্পতিবার বাসায় আসেন আবার শনিবার চলে যান। আমাদের প্রতিবেশীরা অনেক ভালো। আমার একমাত্র বন্ধু লিমনের বাসা আমাদের বাসার পাশেই।" এতক্ষণ নূর তার নতুন বন্ধুকে বলছিলো এ কথা গুলো। নূরের বাবার নতুন এক স্থানে বদলি হয়েছে। তাই তারা পূর্বের স্থান থেকে চলে গিয়েছে। নতুন পরিবেশে নূরের তেমন ভালো লাগছে না। দুপুরে খাবারের পর রুটিন করা ছিলো বাবা মা ঘুমিয়ে গেলেই চুপিচুপি করে বিছানা থেকে নেমে অল্প শব্দে দরজা খুলে মাঠে চলে যেত। সেখানে লিমনের সাথে খেলাধুলা করতো। অবশ্য এজন্য নূরকে সামান্য ঘুমের ভান করতে হতো। নতুন স্থানে এসে এমন কোন কাজ করতে হয় না। কেননা ওর পাশের বাসার ছেলেটি বিকালে খেলাধুলা না করে ঘুমায়। নূরের বিকাল বেলা ঘুমাতে ইচ্ছে করে না। কেনই বা ঘুমাতে ইচ্ছে হবে? একদিন বিকালে ঘুমালো। ঘুম থেকে উঠে দেখে রাত হয়েছে। আবার একদিন ঘুম থেকে উঠে নূর বুঝতে পারে সকাল হয়েছে। নতুন দিন। স্কুলের জন্য রওনা দিতে হবে। স্কুলের পোশাক পরে নূর তার মাকে বলতে যাবে তখন তা মা জানায় এখন তো বিকাল। এসব সমস্যার কারণে নূর বিকালে ঘুমাতে যায় না। একদিকে বিকালে ঘুমাতে ইচ্ছে করে না অন্য দিকে নতুন স্থানের নতুন বন্ধু শ্রাবণ বিকালে সজাগ থাকে না। কোন উপায় না পেয়ে নূর পেন্সিল ও স্কেচবুক নিয়ে ছবি এঁকে বিকাল পার করে দেয়।
ছবি আঁকার সময় নূরের মনে পরে পূর্বের ঘটনা প্রবাহ। একদিন নূর আর লিমন সাইকেল চালাতে চালাতে নদীর তীরে যায়। সেখানে ছিলো গৃহপালিত পশু পাখির খামার। খামারের মালিক দরজার তালা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে। তালা ছিলো বাহিরে রাখা সঙ্গে চাবি। নূর আর লিমন দরজার বাহির থেকে তালা মেরে চাবি নদীর পানিতে ভাসিয়ে দেয়। ঐ খামারের দরজা ছিলো একটি। ফলে পশুদের সাথে একদিন ওখানে কাটাতে হলো খামার মালিককে। পরের দিন তাকে তালা ভেঙে বের করা হলো। পরে জানা যায় ভূতের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। নূর তার স্কেচবুকে এই ঘটনাটি আঁকে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো৷ এখন নাস্তা করে পড়তে বসবে নূর। পড়াশোনা শেষ করে সকালে স্কুলে যাওয়ার জন্য ব্যাগ গুছিয়ে রাখে। ব্যাগ গুছিয়ে রাখার কাজটি নূর রাতেই করে। কেননা সকালে প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যাগে নিতে ভুলেও জেতে পারে। এইতো গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার পড়া তুলে আনার জন্য ডায়েরি আনতে ভুলে যায়। ফলে একটি খাতায় পড়া তুলতে হয়।
সকাল। শ্রাবণ এসে নূরের জন্য অপেক্ষা করে। শ্রাবণ ও নূর এক সাথে স্কুলে যায়। নূর চকলেট কিনে শ্রাবণকে নিয়ে খায়। শ্রাবণ জানায় সে যে চকলেট খেয়েছে তা যেন তার বাবা মা না জানে। কেননা শ্রাবণ যেন বাহিরে কিছু না খায় সেই নিষেধাজ্ঞা আছে। থাকলেও কি হবে শ্রাবণ বাহিরের খাবার খায় কাউকে না জানিয়ে। নূর বলে সে জানাবে কারণ বাবা মাকে না জানিয়ে কিছু করা ঠিক নয়। এতে পাপ হয়। পরকালে এর জন্য শাস্তি পেতে হয়। স্কুল থেকে ফিরে নূর শ্রাবণের বাসায় চলে যায় এবং শ্রাবণের মাকে বলে দেয় শ্রাবণ নূরের থেকে চকলেট খেয়েছে। শ্রবণের মা অনেক খুশি হয় কারণ নূর তাকে জানিয়েছে। কোন কিছু হলে সবার আগে মাকে জানাতে হয়। সেটা তুচ্ছ ও বৃহৎ সমস্যা হোক না কেন। নূরের মা তাকে শিখিয়েছে এসব। শ্রাবণের মাও শ্রাবণ কে নূরের মত হতে বলে। নূরের সাথে বেশি বেশি চলতে বলে।
শুক্রবার। ছুটির দিনে নূরকে ঘুম থেকে জাঁকিয়ে তোলে লিমন। নূর প্রথমে ভাবে স্বপ্ন দেখছে। পরে দেখে এটা স্বপ্ন নয়। লিমন তার বাবার সাথে নূরদের বাসায় এসেছে। লিমনকে নূরের বাসায় রেখে সে চলে যায় এবং সন্ধ্যার সময় নিয়ে যাবে বলে জানিয়ে দেয়। নূর লিমনকে পেয়ে বেশ খুশি। প্রথমে তারা টেলিভিশন দেখে। সকালের খাবার খেয়ে শ্রাবণের বাসায় যায়। শ্রাবণের সাথে লিমনের পরিচয় করিয়ে দেয়। তারা তিনজন মিলে অনেক আনন্দ করে। মসজিদে জুম্মার নামাজ পরতে যায়। ফিরে এসে নূরের বাসায় খাবার খায় এক সাথে। খাবারের শেষ। এখন বিকালে কি করা হবে এমন প্লান করতে বসে তিনজন। প্লান চলাকালীন সময়ে শ্রাবণ ঘুমিয়ে পরে। শ্রবণকে রেখেই নূর ও লিমন সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পরে। এদিকে শ্রাবণ কে কোথাও না পেয়ে শ্রবণের মা বাবা চিন্তিত। অবশেষে দেখা মিলে নূরের বাসায়। সেখানে ঘুমিয়ে আছে। সন্ধ্যা হয়েছে। লিমনের বাবা এসেছে লিমনকে নিতে। লিমন যাওয়ার আগে নূর ও শ্রাবণকে আমন্ত্রণ জানায়।
শ্রাবণ বাসায় গিয়ে দেখতে পায় তার বোন এসেছে। শ্রাবণের বোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে শ্রাবণের বোন। তাই তার বোন যখন বাসায় আসে তখন অনেক কলেজ শিক্ষার্থীরা তাদের বাসায় আসে। তার কাছ থেকে পরামর্শ নেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেমন তা জানতে চায়। পরেরদিন নূর এসে এতো লোক দেখে অবাক হয়ে যায়। নূর শ্রাবণের রুমে গিয়ে চানতে চায় এতো লোক কেন? শ্রাবণ অনেকগুলো পত্রিকা দেখায় সেখানে তার বোনের ছবি দেয়া হয়েছে। তারপর টেলিভিশনেও দেখানো হয়েছে তার বোনকে। কারণ তার বোন সেরা। অনেক মেধাবি। নূর ঠিক করে সে অনেক পড়াশোনা করবে। নূর রাতে আবার আসার পর শ্রাবণের বোনের সাথে দেখা করে। শ্রাবণের বোন নূরকে একটি গল্পের বই উপহার দেয়। নূর অনেক খুশি। শ্রাবণের বোনকে নূর তাদের বাসায় আসতে বলে।
নতুন বই উপহার পেয়ে নূর বেশ খুশি। নূর গল্প পড়তে অনেক ভালোবাসে। কারণ গল্প পড়লে সে ঐ গল্পের দৃশ্য অনুভব করতে পারে। এতে তার চিন্তাশক্তির বাড়ে। সকালে শ্রাবণ নূরের বাসায় আসে সাথে তার বোনও। নূর, শ্রাবণ ও তার বোন এক সাথে স্কুলে যায়। স্কুল ছুটি হলে বাসায় ফিরার সময় তারা ঠিক করে বিকালে কোথাও ভ্রমণে যাবে। নূর অনেক আনন্দিত। অনেকদিন পর সুন্দর বিকাল কাটাতে পারবে লিমনকে ছাড়া।
নূর বাসায় অনুমতি নিয়ে শ্রাবণের বাসায় যায়। শ্রাবণ এখনো তৈরি হয় নি। নূর দ্রুত শ্রাবণ কে তৈরি হতে বলে। তারপর তারা তিনজন স্থানীয় একটি পার্কে ঘুরতে যায়। নূর ও শ্রাবণ কিছু খেতে চাইলে শ্রাবণের বোন কিনে দেয়। কিছুটা খাওয়া শেষ হলে খাবার ফেলে দিতে চায় তারা। কিন্তু শ্রাবণের বোন খাবার খেলে দিতে নিষেধ করে। শ্রাবণের বোন জানায় আমাদের দেশে অনেক খাবার অপচয় হয়। যদি আমরা খাবার অপচয় না করে পরিমাণ মতো খাবার নেই তাহলে অযথা খাবার নষ্ট হবে না।
এই খাবার অপচয়ের ফলে আমরা অন্য দেশের থেকে সামান্য হলেও উন্নতিতে পিছিয়ে থাকবো। তাই আমাদের উচিত খাবার অপচয় না করা। এরপর নূর ও শ্রাবণ ঠিক করে তারা খাবার অপচয় করবে না। এরপর থেকে অল্প খাবার খেতে নিবে প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত পরে নিয়ে নিবে। নূর ও শ্রাবণ চায় বাংলাদেশ অনেক উন্নত হোক। তাই তারা খাবার অপচয় করবে না। নূর ও শ্রাবণের অবশিষ্ট খাবার তারা বাসার জন্য নিয়ে নেয়। বাসায় ফিরে নূর তার মাকে বলছে আজকের ঘটনা। নূরের কথা শুনে তার মা জানায় সে অনেক খাবার অপচয় করে। এখন থেকে আর খাবার অপচয় করবে না।
ছোটগল্প: বিকালে বোধ।
লেখক: মুহাম্মদ আল ইমরান।
নাট্যকলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
প্রকাশক: সময় প্রকাশনী।
Comments
Post a Comment