“আগতির আলপনা”
সোমবার, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,
২৮শে এপ্রিল ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ।
নাট্যকলা বিভাগ, জগন্নাথ
বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। স্থান: ল্যাবকক্ষ – ৬০১, ইউটিলিটি ভবন, জবি,
ঢাকা।
"-নব
নবীনের লাগি
প্রদীপ
ধরিয়া আঁধারের বুকে আমার রয়েছি জাগি!
ব্যর্থ
পঙ্গু খর্ব প্রাণের বিকল শাসন ভেঙে,
নব
আকাঙক্ষা আশার স্বপনে হৃদয় মোদের রেঙে,
দেবতার
দ্বারে নবীন বিধান-নতুন ভিক্ষা মেগে
দাঁড়ায়েছি
মোরা তরুণ প্রাণের অরুণের অনুরাগী!"
হে নবীন,
নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের
চাকা নাটকের গরুর গাড়ির চাকার মতই আমাদের জীবন চক্রাকারে আবির্ভূত হয়। আমরা যতই সামনের
দিকে অগ্রসর হই ততই নব-নব নিত্য দ্বার উন্মোচিত হয়। তেমন দ্বারেই আপনারা এসে পেীঁছিয়েছেন।
এক বিশেষ দিনে- ১৯ তম বিশ্ববিদ্যালয়
দিবসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় এক নতুন সুর, এক নতুন স্পন্দন নিয়ে নবীনসত্তার
পদচারণায় মুখরিত এই প্রাঙ্গণ, যেখানে স্বপ্ন আর সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত
হয়েছে। নাট্যকলা বিভাগের নবীন সদস্যদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এই জ্ঞানালোকিত আঙিনায় পুনরায়
জানাই আন্তরিক স্বাগতম।
আমরা ভ্রাতৃত্ববোধের সঙ্গে স্মরণ করছি আমাদের
বন্ধু ফারহান আহ্সান চেীধুরী(রাফি) কে। মনে হচ্ছে এই তো সেদিনও আমরা একসাথে হাসতাম,
গল্প করতাম, কত স্বপ্ন দেখতাম। আমাদের সেই সোনালি দিনগুলো আজ শুধুই স্মৃতি। হয়তো রাফি
আমাদের মাঝে থাকলে তার গিটার নিয়ে বসে আমাদের মাঝে গান শুনিয়ে দিত কিংবা কোন পছন্দের
অ্যানিমের কথা বলত। রাফি আমাদের মাঝে আছে। ওর স্মৃতি আমাদের মাঝে চিরন্তন হয়ে থাকবে।
হে একাত্মা,
সময়ের আবর্তনে চক্রাকারে আবির্ভূত
আপনারা একেকটি উজ্জ্বল নক্ষত্র, যারা আপন আলোয় আলোকিত করবেন আগামীর পথ। আপনাদের চোখে-মুখে
ভেসে আসা স্বপ্ন আর উদ্দীপনা আমাদের মনেও সঞ্চার করে নতুন আশা। এই বিদ্যাপীঠ শুধু জ্ঞানার্জনের
ক্ষেত্র নয়, এটি একটি পরিবার, যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা একাত্ম হয়ে জ্ঞান,
সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের পথে একসাথে হাঁটে।
হে আগত,
দেশের নাট্য ইতিহাসে বিশ্ববিদ্যালয়
কেন্দ্রিক নাট্যচর্চা এক দৃঢ় অবস্থান করে নিয়েছে। আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা
বিভাগও এর ব্যতিক্রম নয়। ২০১৩ খ্রি : পরবর্তী সময়ে পুরান ঢাকার পূর্ববঙ্গ রঙ্গালয়ের
সন্নিকটে গড়ে ওঠে আমাদের বিভাগ। যাদের অবদানের জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা
বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার
কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়। তবে সময়ের সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয়টি
বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছ। তবুও আমরা একটি সৃজনশীল, মুক্তচিন্তামূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক
পরিবেশ গড়ে তুলবো, যেখানে প্রত্যেক নবীন কণ্ঠস্বর পাবে সমান শ্রবণ ও মর্যাদা। আমরা
একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল ও সম্মান প্রদর্শক হবো—মঞ্চের সামনে হোক বা পেছনে, আলোর নিচে হোক বা
নেপথ্যে। আমরা নাট্যচর্চাকে শুধুই শিল্প নয়, বরং সমাজ, সংস্কৃতি ও মানবিক চেতনার বাহক
হিসেবে গ্রহণ করবো এবং সেই চেতনাকে নিজেদের জীবনবোধে ধারণ করবো। আমরা বিজ্ঞ ও নবীনদের
মাঝে ভ্রাতৃত্ব, সহযোগিতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার বন্ধন অটুট রাখবো—কারণ নাটক কখনো একার পথ নয়, এটি একটি দলগত
যাত্রা। যা আপনারা ইতিমধ্যে অবগত হয়েছেন। আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ঐতিহ্যকে
সমুন্নত রাখবো এবং নাট্যচর্চার মাধ্যমে সত্য, সৌন্দর্য ও প্রগতির পথে এগিয়ে যাবো।
হে অঙ্গন ১১,
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা একাডেমিক
শিক্ষার বা ডিগ্রি প্রদানের চেয়ে অনেক বেশি বিস্তৃত। জ্ঞান সৃষ্টি ও গবেষণা, ব্যক্তিত্ব
ও সামাজিক দক্ষতার উন্নয়ন, ভবিষ্যৎ জীবনের প্রস্তুতি, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার বিকাশ
এখানেই হয়ে থাকে। তাই এখানে একাডেমিক শিক্ষার বা ডিগ্রি গ্রহণের পাশাপাশি নিজেকে তৈরি
করে নিতে হবে। আপনার অনেকেই বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বা আগামীতে
হবেন। আপনাদের উৎসাহী দৃষ্টি আমাদের মুগ্ধ করে। আমরা বিশ্বাস করি—প্রতিটি নবীনই এক একটি অপ্রকাশিত চরিত্র, প্রতিটি
হৃদয় এক একটি অনাবিষ্কৃত নাটক। আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে আপনাদের হাতে আমরা তুলে দিচ্ছি
সেই মঞ্চ, সেই আলো, সেই যাত্রা। সংখ্যায় যেমন ১০ –
১১ কিংবা ১৮ – ১৯ পার্শ্ববর্তী তেমনি আমরা
আপনাদের পাশে থাকবো। আপনাদের তারুণ্যের জয়গান একদিন দিগ্বিদিকে ছড়িয়ে পড়বে। আপনারা
আপনাদের পরিশ্রম, সময়ানুবর্তিতা এবং উৎকৃষ্ট চিন্তাশক্তি দিয়ে দেশের এবং বিশ্বের কল্যাণে
অবদান রাখবেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে আপনাদের আগামীর পথ চিন্তাজগৎ
অধিকার করে বিকশিত হোক জ্ঞান ও সাফল্য।
পঙ্ক্তি: জীবনানন্দ দাশ।
লেখা: মুহাম্মদ আল ইমরান।
Comments
Post a Comment