Skip to main content

৮টি বাংলা নাটকের সারসংক্ষেপ ও চরিত্র বিশ্লেষণ


শিরোনাম: ৮টি বাংলা নাটকের সারসংক্ষেপ ও চরিত্র বিশ্লেষণ।

কোর্সের নাম: বাংলা নাট্যের ইতিহাস (১৭৯৫-১৯৪৭)।

কোর্স কোড: নাট্য ১২০১

 

 

 

 

সূচিপত্র

 

ক্রমিক

নাটকের নাম

নাট্যকার

পৃষ্ঠা

০১

ভদ্রার্জুন

তারাচরণ শিকদার।

০২

একেই কি বলে সভ্যতা

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

০৩

বুড়ো সালিকের ঘাড়ে রোঁ

১২

০৪

কৃষ্ণকুমারী

১৪

০৫

বিসর্জন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

১৭

০৬

ডাকঘর

২০

০৭

রক্তকরবী

২২

০৮

নবান্ন

বিজন ভট্টাচার্য

২৪

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

বাংলা নাটকে পৌরাণিক গল্প থেকে মানুষের কল্পকথা উঠে এসেছে। নিম্নে বাংলা নাটকের উল্লেখযোগ্য ৮টি নাটকের সারসংক্ষেপ, চরিত্রসমূহ ও চরিত্র বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো। যে সকল নাটক থাকছে- ১৮৫২ সালে তারাচরণ শিকদার রচিত ভদ্রার্জুন নাটক। যা পৌরাণিক কাহিনী নির্ভর। ১৮৬০ সালে রচিত মাইকেল মধুসূদন দত্তের একেই কি বলে সভ্যতা?(নব্য ইংরেজ রীতিনীতি অনুসরণ করা নব্য ইংরেজ বাবুদের কার্যকলাপ তুলে ধরেছেন এই নাটকে), বুড়ো সালিকের ঘাড়ে রোঁ(সমাজের সম্পদশালীদের অর্থের প্রতি লিপ্সা ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যহীনতা তুলে ধরা হয়।) এবং ১৮৬১ সালের কৃষ্ণকুমারী নাটক(কন্যার বিবাহ নিয়ে রাজ্যের ভিতরে গোলযোগ এবং কৃষ্ণকুমারীর দেহ ত্যাগ)। ১৮৯০ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত বিসর্জন(ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করা পুরোহিতের পাল্য পুত্রে দেহ ত্যাগ ও বাস্তব দেবীর আত্মপ্রকাশ), ১৯১১ সালের ডাকঘর(পার্থিব জগৎকে প্রত্যাখ্যান করে নতুন জগতের প্রতি বালকের আকর্ষণ), ১৯২৩ সালের রক্তকরবী(মানুষের জীবনে প্রেম, ভালোবাসা নেই আছে যন্ত্রের মত কর্মের দাগিত)। এর পরে রয়েছে ১৯৪৩ সালে রচিত বিজন ভট্টাচার্যের নবান্ন নাটক। একই সঙ্গে আগস্ট আন্দোলন, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, এবং বিশ্বযুদ্ধের পরিমণ্ডল গড়ে তুলতে হয়েছে নাটকে। বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম ও নবান্নের আগমন উঠে আসে এই নাটকে। যা নাট্য ইতিহাসের ভারতীয় গণনাট্য আন্দোলনের মূখ্য নাটক।

 

১. নাটক: ভদ্রার্জুন।

নাট্যকার: তারাচরণ শিকদার।

বাংলা সাহিত্যের প্রথম মৌলিক নাটক ভদ্রার্জুন এর রচয়িতা নাট্যকার তারাচরণ শিকদার। এটি বাঙালি কর্তৃক রচিত প্রথম নাটক। তবে শর্মিষ্ঠা নাটকটি প্রথম সার্থক ও আধুনিক নাটক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, যার রচয়িতা মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

 

সারসংক্ষেপ-

১ম অঙ্ক:

১ম সংযোগস্থল:

দেব ঋষি নারদ বীণাযন্ত্রে হরিগুণ গান করে মহারাজ যুধিষ্ঠিরকে জয়োস্তু জানায়। মহারাজ তাকে দেখে মনোমালিন্য দূরে করে। নারদ পঞ্চভ্রাতাকে বলে- তোমরা পাঞ্চালীর পঞ্চ স্বামী। তোমরা এক এক জন দ্রৌপদী সহিত কালক্ষেপণ করিবে এবং একের সময়ে অন্য যিনি দ্রৌপদীর গৃহে প্রবেশ করবে তাকে দ্বাদশ বৎসর তীর্থপর্য্যটন করতে হবে। নতুবা পাপ ধ্বংস হবে না। একথা জানিয়ে নারদ চলে যায়।

২য় সংযোগস্থল:

এক ব্রাহ্মণ রাজপুরীতে এসে আক্ষেপ করে তখন অর্জুন সম্মুখবর্তী হয়ে প্রশ্ন করে তাকে।সে জানায় তার গোধন তস্করে নিয়ে গেছে। অর্জুন বলে ধর্মরাজ দ্রোপদীর সনে তাই ঐ গৃহ প্রবেশ করা যাবে না। ঐ গৃহে অস্ত্রাদি আছে। তবে অর্জুন ধনুর্ব্বাণ নিয়ে তস্করদের ধৃত করে এবং গোধণ উদ্ধার করে ব্রাহ্মণকে দেয়। ব্রাহ্মণ তা পেয়ে অর্জুনকে আশীরাশি প্রদান করে নিজ গৃহ যায়।

৩য় সংযোগস্থল:

যুধিষ্ঠির ও দৌপদীর সম্মুখে অর্জুন এসে বলে সে দ্বাদশ বৎসর তীর্থ যাবে। যুধিষ্ঠির ও দৌপদী কারণ জানতে চাইলে সে জানায়- মহারাজ যখন কৃষ্ণা সহ শয়নাগারে ছিল তখন সে ব্রাহ্মণের উপকারার্থে কক্ষে প্রবেশ করেছে। এর ফলে সন্ধি লঙ্ঘিত হয়েছে। অর্জুন তার এই ভুলের জন্য তীর্থে যেতে চায় কিন্তু যুধি. ও দ্রৌপ. বলে তার কোন ভুল হয় নাই। ভীম এসে বলে সকলকে আশাপথে বিস্তার করে সে যেন না যায়। তবুও অর্জুন যুধিষ্ঠির, ভীম ও কুন্তীকে প্রণাম করে তীর্থে গমন করে।

 

দ্বিতীয় অঙ্ক:

১ম সংযোগস্থল:

দ্বারকা, বসুদেবের শয়নাগারে দেবকী, রোহিণী আসে। দেবকী বলে পুত্র শোকে তার জীবন ব্যথিত এবং সুভদ্রার ভাবনাতে তার নিদ্রাহার দূর হয়েছে। রোহিণী বলে সুভদ্রা বড়ই সুবোধ মেয়ে তার জন্য তার জন্য পাত্রের সন্ধান করে বিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা উচিত।

২য় সংযোগস্থল:

যুধিষ্ঠির মাতুল বসুদেব এসে দ্বারীকে বলে বসুদেবের জ্যেষ্ঠ পুত্র বলদেবকে ডাকতে। বলদেব এসে পিতার শারীরিক অবস্থা জানতে চাইলে বলে তার কোন সমস্যা নেই। তবে মনঃপীড়ায় সে কাতর। এর কারণ জানতে চাইলে বসুদেব ছেলেকে বলে তার জননীরা গত রাতে তিরস্কার করেছে। অবশ্য এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন সুভদ্রার বিয়ে প্রসঙ্গ। বসুদেব বলে- যদুবংশীয়ের কন্যা সুভদ্রা, তার জন্য উপযুক্ত সুন্দর সুপাত্র চাই। সে আরো বলে কৃষ্ণকে ডেকে উভয় মিলে ব্যবস্থা করতে। কিন্তু বলদেব বলে- সে কুষ্ণকে না জানিয়ে নিজে এ কাজ করবে। বলদেব পিতাকে আচ্ছাস দেয় সুভদ্রার বিয়েতে কোন আপদ হবে না। তবে বসুদেব সাবধান করে দেয় যেন কৃষ্ণের সঙ্গে কোন কলহ না হয়। বলদেব জানায় কোন কলহ হবে না।

৩য় সংযোগস্থল:

সুভদ্রার বর হিসেবে দুর্য্যোধনের কথা ওঠে। কিন্তু তার পিতা অন্ধ এ নিয়ে সকলের মাঝে আলোচনা। প্রবীণা প্রতিবাসিনীর মতামত হলো- দুর্য্যোধনের পিতার কোন সমস্যা থাকলে এতে তো দুর্য্যোধনের কোন সমস্যা নয়। তবে দুর্য্যোধনের পিতা বেয়াই হিসেবে যদি কানা হয় তামাসা হবে না। অবশ্য বেয়াই তো তামাসার সম্পর্ক। কিনু কাণা বেয়াই হলে তামাসা চলবে না। রোহি. দেব.কে বলে যদি ভুল ধর তাহলে আমাদের বংশের যযাতির শরীরে পৃথিবীর তাবৎ রোগ হয়েছিল। এই বিচারে যযাতি বংশীয় কন্যা সুভদ্রা তো দুর্য্যোধনের থেকেও অধম। প্রতিবাসিনী বলে নিজেদের মধ্যে বিবাদ কেন কর? সুভদ্রার বিয়ে নিয়ে বসুদেব ও ছেলে ভালো বুদ্ধি করবে।

 

তৃতীয় অঙ্ক:

১ম সংযোগস্থল:

অর্জুনকে প্রভাস তীর্থ দেখে দারূক, প্রহরী ও একজন সেনা গিয়ে প্রণাম করে। অর্জুন দারূক কে নিয়ে কৃষ্ণের কাছে যেতে চাইলে দারূক বলে তাকে অপেক্ষা করতে এবং সে চলে যায় কৃষ্ণকে সংবাদ দিতে।

২য় সংযোগস্থল:

কৃষ্ণকে গিয়ে দারূক পাণ্ডুপুত্র অর্জুনের আগমনের বার্তা জানায়। কৃষ্ণা তার সর্বাপেক্ষা প্রিয়পাত্র অর্জুনের আগমনের কথা শুনে উৎফুল্ল। দ্রুত সকলকে তৈরি হতে বলে সে রথারোহণে অর্জুনের নিকট গমন করে।

৩য় সংযোগস্থল:

প্রভাস তীর্থে কৃষ্ণ আসলে অর্জুন তাকে প্রণাম করে। কৃষ্ণ অর্জুনকে আলিঙ্গন করে যুধিষ্ঠির, ভীম, নকুল, সহদেব এবং পিতৃষ্বসা কুন্তী ঠাকুরাণীর কথা জানাতে চায়। তখন অর্জুন বলে সে দ্বাদশ বৎসর হয়েছে ইন্দ্রপ্রস্থ থেকে দূরে আছে। তখন কৃষ্ণ এর কারণ জানতে চাইলে সে বলে দ্রৌপদীর সহবাস নিয়ে সন্ধির লঙ্ঘন করেছে। তাই তীর্থে আছে। পরে সকলে রথারোহণে অট্টালিকাতে গমন করে৷

৪র্থ সংযোগস্থল:

পর্ব্বতোপরি অট্টালিকায় সত্যভামা ও সুভদ্রা মগ্নচিত্তে অর্জুনের অতীত ঘটনা নিয়ে কথা বলে। এমন সময় সহচরী এসে জানায়- কেহ ঘাটে, কেহ মাঠে, কেহ পথে, কেহ গবাক্ষে থাকিয়া রাজপথে অর্জুনকে দেখছে কামিনীগণ। সুভদ্রা, সত্যভামা ও সহচরীও অর্জুনকে দেখতে যায়।

৫ম সংযোগস্থল:

রাজবর্ত্ময় এক বাতুল, এক মদ্যপায়ী ও কতিপয় পথিক অর্জুনের আগমনের বিষয়ে কথা বলছে। মদ্যপায়ী মদ্য পান করে গান করছে। কেউ বলে কৃষ্ণ দুই দেহ নিয়ে আছে, অর্জুনের উপস্থিতি নেই। পরক্ষণেই দেখা যায় কৃষ্ণ আর অর্জুন একই সাথে রয়েছে।

৬ষ্ঠ সংযোগস্থল:

সুভদ্রার সংলাপে অর্জুনের প্রতি ভালোলাগা বৃদ্ধি পেতে থাকে। অর্জনকে দেখার পর এমন মনোবাসনা জন্মে সুভদ্রার। সত্যভামা সুভদ্রাকে জানায় ভয় নেই, আমি তোরে মিলাইয়া দেব। পরে সত্যভামা ও সুভদ্রা গৃহমধ্যে প্রবেশ করে।

৭ম সংযোগস্থল:

সত্যভামার অন্তঃপুরে কৃষ্ণ প্রবেশ করার পর সত্যভামা তাকে জানায়, সুভদ্রা অর্জুনের প্রতি মন করিয়াছে সমার্পণ। অর্জুন বিহীনে না সে বাঁচবে না। কৃষ্ণ বলে সে অর্জুনকে একথা বলতে কোন ভয় করে না তবে সন্দেহ হয় যদি স্বীকার না করে। তাই সত্যভামাকে গিয়ে বলতে বলে।

৮ম সংযোগস্থল:

অর্জুনের শয়নাগারে সুভদ্রা ও সত্যভামা আসে। দ্বারে আঘাত করে। রাত্রিতে হঠাৎ দরজা খুলতে না করে৷ পরে সুভদ্রার পরিচয় পেয়ে খুলে দেয়। কিন্তু অর্জুন দ্বার উদ্ঘাটন করে দেখতে পায় সুভদ্রাও সঙ্গে আছে।

৯ম সংযোগস্থল:

রৈবত পর্ব্বতে বলদেবের সভা। নারদ এসে বলদেবকে জানায় শ্রীকৃষ্ণ পদে পদে তার অপমান করে। কারণ- সুভদ্রার জন্য বলদেব পছন্দ করছে দৃর্য্যোধনকে। কিন্তু কৃষ্ণ ভর্দাকে অর্পন করতে চায় অর্জুনকে। এদিকে বলদেব দূত ডেকে বিয়ের আয়োজনে নিমন্ত্রণ পত্র নিয়ে দেশ বিদেশে পাঠিয়েছে।

 

৪র্থ অঙ্ক:

১ম সংযোগস্থল:

হস্তিনা ধৃতরাষ্ট্রের সভায় নারদ এসে মহারাজের সৌভাগ্যের সীমা নেই তা বলে। কেননা কৃষ্ণের ভগিনী সুভদ্রার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছে দুর্য্যোধনের। দুর্য্যোধন বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। শকুনি যুধিষ্ঠিরকে জানানোর জন্য তার নিকট দূত প্রেরণ করেছে।

২য় সংযোগস্থল:

দূত ইন্দ্রপ্রস্থে যুধিষ্ঠির কাছে বলদেবের ভগিনী সুভদ্রার সঙ্গে দুর্য্যোধনের বিয়ের আমন্ত্রণ নিয়ে আসে। যুধিষ্ঠির জানায় তার পক্ষে হতে একজন যাবে বরযাত্রায়। পরক্ষণে ভীম এসে জানায় সে শুনেছে অর্জুনের সঙ্গে সুভদ্রার বিবাহ।

৩য় সংযোগস্থল:

হস্তিনার রাজবর্ত্মে বরযাত্রীরচ প্রস্তুত এমন সময় ভীম উপস্থিত হয়। ভীমকে দেখে দুঃশাসন বলে কৃষ্ণের সঙ্গে সখ্যতা হয়েছে বিধায় ভীম আগাম করেছে। দুর্য্যোধন রব সেজে যাচ্ছে দেখে ভীম বলে তার বর সেজে যাওয়া উচিত না। কেননা দ্বারকাপরী অনেক দূর এবং বিবাহের কি হয় তা বলা যায় না। দুর্য্যোধন আপন মনে বলে ভীম এমন বলছে মানে সে তাকে হিংসা করছে। দুর্য্যোধন সকলকে বলে ভীমের কথা কর্ণপাত না করতে। কেননা বলদেব কর্তৃক সে বিবাহের আমন্ত্রণ পেয়েছে। সকলে যাত্রা শুরু করে।

 

৫ম অঙ্ক:

১ম সংযোগস্থল:

রৈবত পর্ব্বতোপরি অট্টালিকায় কৃষ্ণ ও সত্যভামা। সত্যভামা বিপদ লক্ষ করে। বিপদ হলো সুভদ্রার বিবাহ নিয়ে। ভদ্রার গন্ধবর্ব বিবাহ হয়েছে অর্জুনের সঙ্গে। আবার যদি দুর্য্যোধনের সঙ্গে বিয়ে হয় তাহলে বিবাহিত কন্যার পূনঃবিবাহ হবে। তবে কৃষ্ণ বলে যদি সুযুক্তি করা যায় তাহলে বিপদের সমাধান মিলবে।

২য় সংযোগস্থল:

বৈবত পর্ব্বত অর্জুনের শয়নাগারে কৃষ্ণ অর্জুনকে গিয়ে বলে তুমি ভদ্রাকে গ্রহণ কর। এতে তারা সঙ্গে আছে। সে আরো বলে বলদেবের অভিপ্রায় যাহা হোক, তাহাতে ভয় নাই। ভদ্রা তোমার, তোমাকে অর্পণ করিয়াছি। সে অর্জুনকে বলে সুভদ্রাকে কুলাঙ্গানাগন যখন হারিদ্রাদি মর্দ্দন করিয়ে স্মানার্থে নিয়ে যাবে তখন তাকে নিয়ে অর্জন চলে যাবে।

৩য় সংযোগস্থল:

বলদেবের সভায় দুর্য্যোধনের দূত এসে দুর্য্যোধনের আগমনের কথা বলে। বলদেব দ্বারীকে ডেকে অন্তঃপুরে এ সংবাদ দিতে বলে।

৪র্থ সংযোগস্থল:

অন্তঃপুরে সত্যভামা ও সুভদ্রা বিয়ে প্রসঙ্গে কথা বলে। বলদেব কেন তার জন্য কাল হল এ জন্য চিন্তিত সুভদ্রা। তবে সত্যভামা তাকে উৎসাহ দেয় যে অর্জুন তার হবে। কল্য প্রভাতে অর্জুনকে দিয়ে স্বচ্ছন্দে গমন করবে।

৫ম সংযোগস্থল:

পরের দিন কৃষ্ণের সভায় দারূক এসে জানায় অর্জুন তাকে রথ প্রস্তুত করতে বলেছে। কৃষ্ণ তাকে অনুমতি দিয়ে দেয় অর্জুন যা বলতে সে কথা যেন পালন করে।

৬ষ্ঠ সংযোগস্থল:

অন্তঃপুরে বিয়ের কর্মযজ্ঞ। সকলে নানাবিধ বাদ্যধি নিয়ে উলু উলুধ্বনির দিতে দিতে সরোবর তীরে যাচ্ছে।

৭ম সংযোগস্থল:

অর্জুন দারূককে রথতার নির্দেশ চালানোর কথা বলে। অর্জুন রথ থেকে বের হয়ে সুভদ্রাকে রথে নিয়ে চলে গেল। সকলে বলদেবকে কি বলতে এ নিয়ে চিন্তিত। তখন সত্যভামা বলে যে ব্যক্তি লক্ষ নৃপতি জয় করে দ্রৌপদীকে লাভ করেছে, তাকে কি কোন স্ত্রীলোক বাধা দিতে পারে?

৮ম সংযোগস্থল:

বরপক্ষ নগরে ঢুকতেই খবর পায় কন্যা গৃহত্যাগ করেছে। কৃষ্ণের ভগিনী সুভদ্রার বিবাহ হয়েছে অর্জুনের সঙ্গে। দুঃশাসন অর্জুনের বিপক্ষে যুদ্ধ করে সুভদ্রাকে ফিরিয়ে আনতে চাই। কিন্তু ভীম কটাক্ষ করে। কেননা এখানে আসার আগে ভীম বলেছিল বরের সাজ ত্যাগ করে আসতে। যদি সেরূপ আসত তাহলে বেশি অপমানিত হত না। দুর্য্যোধন বলে বলদেব তাদের এনে অপমান করেছে। সে নারায়ণের শিক্ষা কাজে লাগিয়ে অর্জুনের বধ করতে চায়। ভীষ্ম দুর্য্যোধনকে সান্ত্বনা দেয়, ধৈর্য্য ধরতে বলে৷ পরে দুর্য্যোধন সিদ্ধান্ত নেয় তীর্থে যাবে। কিন্তি কর্ণর উৎসাহে রাজ্যে ফিরে যেতে চায়।

৯ম সংযোগস্থল:

বলদেবের সভায় দূত এসে সুভদ্রার সম্পর্কে জানতে চাইলে সে বলে সুভদ্রা অদ্য ভদ্রার বিবাহ। কিন্তু দূত জানায় ভদ্রা অর্জুনের নিকট চল গেছে৷ বলদেব অঙ্গীকার করে স্বর্গ মত্য ও পাতাল অদ্যই চুর্ণ করবে, কোথায় সে জাবজ, সেই অর্জুন।

১০ম সংযোগস্থল:

বসুদেবের গৃহে বলদেব এসে জানতে চায় যখন বলদেব ভদ্রার বিয়ের প্রসঙ্গ তুলেছিল তখন কেউ বলে নি ভদ্রার বিয়ের ব্যাপারে।

 

চরিত্র সমূহ:

১. ধৃতরাষ্ট্র(হস্তিনার বুদ্ধ রাজা)

২. যুধিষ্ঠির(অধিপতি)

৩. ভীম(যুধিষ্ঠিরের ভ্রাতৃগণ)

৪. অর্জুন(যুধিষ্ঠিরের ভ্রাতৃগণ)

৫. নকুল(যুধিষ্ঠিরের ভ্রাতৃগণ)

৬. সহদেব(যুধিষ্ঠিরের ভ্রাতৃগণ)

৭. দুর্য্যোধন(ধৃতরাষ্ট্রের তনয় ও যুবরাজ)

৮. দুঃশাসন(ধৃতরাষ্ট্রের তনয় ও যুবরাজ)

৯. ভীম(শান্তনুর তনয়)

১০. কর্ণ(দুর্য্যোধনেব সখা)

১১. বসুদেব(যুধিষ্ঠিরের মাতুল)

১২. কৃষ্ণ(বসুদেবের কনিষ্ঠ পুত্র)

১৩. বলদেব(বসুদেবের জোষ্ঠ পুত্র)

১৪. নারদ(দেব ঋষি)

১৫. দারূক(সাবথী)

১৬. সত্যভামা(কৃষ্ণের প্রধান মহিষী)

১৭. রুক্মিণী(কৃষ্ণের দ্বিতীয় মহিষী)

১৮. দ্রৌপদী(পাণ্ডবগণের স্ত্রী)

১৯. সুভদ্রা(কৃষ্ণ ও বলদেবের ভগিনী)

২০. সহচরী

২১. প্রতিবাসিনী

অন্যান্য কুলকামিনী গণ

দূত, দ্বারী, প্রহরী, এক মদ্যপ, বাতুল ও পথিক গণ ইত্যাদি।

 

উল্লেখযোগ্য চরিত্র বিশ্লেষণ:

অর্জুন:

যুধিষ্ঠিরের ভ্রাতা। পঞ্চপাণ্ডবদের মধ্যে তৃতীয় অর্জুন। অর্জুন এর আরো বেশ কিছু নাম রয়েছে। তাদের মধ্যে কিছু নাম হল – অরিমর্দন, কপিকেতন, কপিধ্বজ, কিরীটী, কৃষ্ণসখ, কৃষ্ণসারথি, কৌন্তেয়, গাণ্ডিবধন্বা, গাণ্ডিবী, গুড়াকেশ, চিত্রযোধী, জিষ্ণু, তৃতীয় পাণ্ডব, ধনঞ্জয়, পার্থ, ফল্গুন, ফাল্গুনি, বিজয়, বীভৎসু, শব্দবেধী, শব্দভেদী, শুভ্র, শ্বেতবাহ, শ্বেতবাহন, সব্যসাচী।

সুভদ্রা:

কৃষ্ণ ও বলদেবের ভগিনী। তিনি কৃষ্ণের ভগিনী, অর্জুনের স্ত্রী(পত্নী) এবং অভিমন্যুর মাতা। অর্জুন ব্রহ্মচর্যব্রত পালন করে ঘুরতে ঘুরতে দ্বারকায় আসেন। পরে এক উৎসব উপলক্ষে কৃষ্ণের সাথে ইনি রৈবত পর্বতে যান। সেখানে অর্জুনকে যাদবরা সংবর্ধনা দেন। উক্ত অনুষ্ঠানে অর্জুন সুভদ্রাকে দেখে মুগ্ধ হন। অর্জুনের মনোভাব জানতে পেরে কৃষ্ণ এই বিবাহে সাহায্য করার অঙ্গীকার করেন।

দ্রৌপদী:

পাণ্ডবগণের স্ত্রী। তিনি পঞ্চপাণ্ডবের সহধর্মিনী। তিনি দ্রুপদের কন্যা বলে তার নাম দ্রৌপদী। তিনি পাঞ্চালী ও যাজ্ঞসেনী নামেও পরিচিতা।

সত্যভামা:

কৃষ্ণের প্রধান মহিষী। সত্যভামা শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রীদের মধ্যে তৃতীয় । তিনি বৃষ্ণিবংশীয় সত্রাজিতের কন্যা। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুসারে সত্যভামা ভূদেবী বা বসুমতী/বসুন্ধরার অবতার।

 

২. নাটক: একেই কি বলে সভ্যতা?

নাট্যকার: মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত জন্মগ্রহণ করেন ২৫ জানুয়ারি ১৮২৪ সালে সাগরদাঁড়ি, যশোর, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ)। তাকে বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব গণ্য করা হয়। মাইকেল মধুসূদন দত্তের ব্যক্তিগত জীবন ছিল নাটকীয়। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে কলকাতায় এই মহাকবির মৃত্যু হয় ২৯ জুন ১৮৭৩ সালে।

 

সারসংক্ষেপ:

প্রথমাঙ্ক, প্রথম গর্ভাঙ্ক:

নবকুমার বাবুর গৃহে নবকুমার ও কালীনাথ বাবু কথা বলে। বোদের নিকট কর্ত্তার সম্পর্কে জানতে চেয়ে বোতল ও গ্লাস শ্রীঘ্র আনতে বলে। বোতল আনার পর তারা মদ্যপান করে৷ কালী প্রাণম করে কর্ত্তার নিটক নিজের পরিচয় তুলে ধরে কৃষ্ণপ্রসাদ ঘোষের ভ্রাতুষ্পুত্র হিসেবে। কালীনাথের সম্পর্কে জ্যেঠা হয় কর্ত্তা। তাই কালী তার কাছে নবকুমারকে নিজের সঙ্গে যেতে আজ্ঞা করতে বলে। কেননা তারা বলে জ্ঞানতরঙ্গিণী নামে একটি সভায় সিকদার পাড়ার গলিতে যাবে। সভাটি সংস্কৃতিবিদ্যা আলোচনার জন্য। কর্ত্তার মনে সন্দেহ হওয়ার জন্য বাবাজীকে নব ও কালীকে দেখার জন্য পাঠানোর চিন্তা করে।

 

প্রথমাঙ্ক, দ্বিতীয় গর্ভাঙ্ক:

সিকদার পাড়া স্ট্রীটে বাবাজী নবদের সন্ধানের জন্য জ্ঞানতরঙ্গিণী সভা খুঁজে। কিন্তু সিকদার পাড়া স্ট্রীটে তেমন কোন ঠিকানা না পেলেও মাতাল, বারবিলাসিনীদের সঙ্গে দেখা হয় তার। সারজন ও চৌকিদারকে দেখে বাবাজী লুকিয়ে পরে চৌকিদার আবার সারজনের নির্দেশে তাকে ধরে আনে চোর হিসেবে। তার থেকে টাকা রেখে তাকে ছেড়ে দেয়৷ বাবাজী নব ও কালীর দেখা যায়। কিন্তু তাদের সভার অবস্থান সম্পর্কে কোন সুনির্দিষ্ট দৃশ্যমানতা নেই৷

 

দ্বিতীয়াঙ্ক, প্রথম গর্ভাঙ্ক:

সভা কক্ষে কতিপয় বাবুদের প্রবেশ। কালী ও নব আসতে দেরি করে সভার প্রধান ঘোষনা হয়। সকলে মদ্যপান করে আমোদ করে। নব ও কালীর আসতে দেরি হয়। নব ও কালী সহ সকলে মদ্যপান করে। বৈষ্ণব বাবাজী ওদের থেকে ঘুষ নেয়। নব সকলকে বলে তাদের এই সভার নাম জ্ঞানতরঙ্গিণী সভা। কিছুক্ষণ পর শুরু হয় নৃত্য।

 

দ্বিতীয়াঙ্ক, দ্বিতীয় গর্ভাঙ্ক:

নবকুমার বাবুর শয়নমন্দিরে প্রসন্নময়ী, নৃত্যকালী, কমলা এবং হরকামিনী দাদার বিছানায়। গৃহিণী এসে বলে তোরা কলিকালে মেয়ে। নৃত্য জানতে চায় তার জেঠাইমায়ের কাছে তারা কলি কালে মেয়ে কেন? জ্ঞানতরঙ্গিনী সভা থেকে এসে বাবু ঠাকুরঝির গালে চুমো খেলেন। নবাবকে নিয়ে বৈদ্যনাতের প্রবেশ নব মাতাল। আবার ব্রাণ্ডি খেতে চায় বোদের কাছে৷ নব বলে বুড়ো একবার চোখ বুঝতে তাকে আর কেউ বাঁধা দিতে পারবে না। হরকামিনী প্রসন্নময়ীকে বলে গিয়ে দাদাকে চুক করতে। কেননা কর্ত্তা ভাত খাচ্ছে। এমন সময় নবকুমারের ঘরের গৃহিণীর প্রবেশ। সে তার ছেলের অবস্থা দেখে হতাশ। কর্ত্তা ছেলের অধঃপতনের কারণ হিসেবে বলে 'এ কলকাতা মহাপাপ নগর-কলির রাজধানী।' হরকামিনীর মত কত অভাগা স্ত্রী এইরূপ যন্ত্রণা ভোগ করে তার হিসেবে নেই। স্বামী মদ্যপান করে মাতাল হয়ে গৃহে প্রবেশ করে। আবার তারা বলে, সাহেবদের মতন সভ্য হয়েছি। "মদ মাস খ্যেয়ে ঢলাঢলি কল্লেই কি সভ্য হয়? একেই কি বলে সভ্যতা?"

মাইকেল মধুসূদন দত্তের “একেই কি বলে সভ্যতা?” নাটকের চরিত্র সমূহ:

. কর্ত্তা মহাশয়।

. নব বাবু।

. কালী বাবু।

. বাবাজী।

. বৈদ্যনাথ।

. বাবুদল।

. সারজন।

. চৌকিদার।

. যন্ত্রীগণ।

১০. খানসামা।

১১. বেহারা।

১২. দরওয়ান।

১৩. মালী।

১৪. বরফওয়ালা।

১৫. মুটিয়াদ্বয়।

১৬. মাতাল।

১৭. গৃহিণী।

১৮. প্রসন্নময়ী।

১৯. হরকামিনী

২০. নৃত্যকালী।

২১. কমলা।

২২. পয়োধরী।

২৩. নিতম্বিনী(খেমটাওয়ালি)

২৪. বারবিলাসিনীদ্বয়।

 

উল্লেখযোগ্য চরিত্র বিশ্লেষণ:

নব বাবু:

কর্ত্তা মহাশয় ও গৃহিণীর ছেলে নব বাবু। নব্য ধারার অনুসারী। তৎকালীন সময়ে যখন ইংরেজদের সংস্কৃতি আমাদের উপমহাদেশে আসতে শুরু করে তখন এই ভূখণ্ডের যুবক ও নব্য শিক্ষিতরা সেং সংস্কৃতিতে ১ম বলে অভিহিত করে তা গ্রহণ করে৷ আর নিজেদের সংস্কৃতিতে ২য় সংস্কৃতি হিসেবে দূরে সরে যায়। তারা বিদেশীদের মত মদ্যপান করে, পোশাক-পরিচ্ছদের পরিবর্তন আনে। এমনই এক চরিত্র নব বাবু। যিনি জ্ঞানতরঙ্গিনী সভা থেকে আসলেই হয়ে যান মাতাল। তাদের নিকট ওটাই ছিলো সভ্যতার বিকাশ।

গৃহিণী:

বাংলার মা সহজ চিন্তা মননে আবৃত্ত। তার ছেলে নব যে বিপথে গেছে তা তার ধারণাতীত। যখন কর্ত্তা বলে তাদের ছেলে লক্ষ্মীছাড়া মাতাল হয়েছে। তখনও গৃহিণী নব বাবুকে দুধের বাছা বলে অভিহিত করে। মাতৃস্নেহের নিকট সন্তান আজন্মকাল ছোট।

কর্ত্তা মহাশয়:

নবকুমার বাবুর পিতা কর্ত্তা মহাশয়। পিতার শাসনের কমতি ছিল না তার চরিত্রে। তবুও জ্ঞানের আলোর সন্ধানের নামে জ্ঞানহীনতাকে প্রাধান্য দিয়েছে তার ছেলে। পিতা হিসেবে বেশ সচেতন বলেও সিকদার পাড়া স্ট্রীটে নবকুমারকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য বাবাজীকে পাঠানো হয়। আবার নবকুমার কালীর সঙ্গে যাওয়ার জন্যও তার অনুমতি প্রার্থনা করে। সার্বিক দিকে তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। নবকুমারকে বংশের কুলাঙ্গার মনে করে।

 

৩. নাটক: বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ।

নাট্যকার: মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

 

সারসংক্ষেপ-

প্রথম গর্ভাঙ্ক:

বৃষ্টি না হওয়াতে হানিফ গাজির ধান ভালো হয়নি। তাই ১০ ছালাও বাগিতে আনতে পারে নি। খাজনা দেয়ার জন্য হানিফ গাজি বাপ দাদার ভিটে ছেড়েছে। সন্দেহ করছে এবার কত্তা বাবু লাঙ্গল আর গরু নিয়ে নিবে। কত্তা ভক্তপ্রসাদ বাবু খাজনা চায়। তাতে ফসল হয়েছে কিনা সেটা তার দেখার কাজ তার না। কেননা কোম্পানির সরকারে তাকে ছাড়বে না। হানিফের ১১ সিকি হয়েছে খাজনা কিন্তু সে দিতে চায় তিন সিকি। কত্তা হানিফকে জমাদারের জিম্বে করতে বলে। তখন গদাধর এসে বলে হানিফের প্রকৃতিস্বরূপা স্ত্রীর কথা। যে দেখতে সুন্দরী, বয়স উনিশ, রঙ কাঁচা সোনার মত। কত্তা হানিফের স্ত্রীকে পাবে এমন বাসনায় হানিফের নিকট থেকে ৩ সিকি রেখে দেয়। বাচস্পতির কিঞ্চিৎ ব্রহ্মত্র জমি ছিল তা ভক্তপ্রসাদ বাবুর বাগানের মধ্যে পরে বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কত্তা জানায় সে বাচস্পতির কোন উপকারে আসতে পারবে না কারণ অল্প দিনের মধ্যে তাকে বিশ হাজার টাকা খাজনা দিতে হবে। বাচস্পতি প্রস্থানের পরক্ষণেই ভক্তপ্রসাদ গদাধরের নিকট হানিফের স্ত্রীর প্রসঙ্গে তুলে ধরে। কলসী নিয়ে ভগী ও পঞ্চী পানি আনতে যায়। ভক্তপ্রসাদ এখানে কোন একটা ব্যবস্থা করতে বলে গদাধরকে কিন্তু সে জানায় পঞ্চীর বড় ঘরে বিয়ে হয়েছে। যখন পঞ্চী জেঠা রূপে ভক্তপ্রসাদকে প্রণাম করে তখন ভক্তপ্রসাদের কুদৃষ্টিতে পঞ্চী শিউরে ওঠে।

 

দ্বিতীয় গর্ভাঙ্ক:

ফাতোমা হানিফকে জানায় তাকে পঞ্চাশ টাকা দেয়ার কথা বলেছে। পুঁটি ভক্তপ্রসাদ বাবুর জন্য নারী জোগাড় করে দেয়। এজন্য পুঁটি অনেক কুলের ঝি বউ, কত রাঁড়, কত মেয়েদের পরকাল নষ্ট করেছে তার ঠিক নেই। আজ এসেছে ফতোমার নিকট তাকে রাজি করাতে। পুঁটি ফতোমাকে রাজি করিয়ে টাকা দেয়। হানিফ আড়ালে সব কথা শুনে ফতোমাকে সমঝে চলতে বলে যাতে ভক্তপ্রসাদ বাবু তার গায়ে হাত দিতে না পারে। বাচস্পতি হানিফের নিকট আসে তেঁতুলগাছ কাঁটার জন্য তাকে নিতে। হানিফ তাকে এক পাশে নিয়ে কিছু বলে। পুঁটি ফতোমাকে বিস্তারিত বলে রাত ৪ টায় আগে আসতে বলে। হানিফ বাচস্পতিকে বলে একটা পরিকল্পনা করে তারা।

 

দ্বিতীয়াঙ্ক, প্রথম গর্ভাঙ্ক:

পুঁটি জানিয়েছে পঞ্চীকে পাওয়া যাবে না। আনন্দ বাবু এসেছে হিন্দু কলেজ থেকে। ভকু্তপ্রসাদ তাকে বলে সে শুনেছে কলকাতায় হিন্দুদের বাড়িতে মুসমান বাবুর্চি রাখে। এজন্য তিনি এক প্রকার বিরক্ত। কিন্তু তিনিই আবার মুসলমান নারীর সঙ্গে সময় কাটাতে চান। ভক্তপ্রসাদ বাবু যখন বাড়িতে নেই তখন গদাধর তার বিছানায় শুয়ে তার হুঁকা পান করে। রামের দ্বারা নিজের গা টেপায়। ভক্তপ্রসাদ এসে জানতে চায় হানিফের স্ত্রীর নিয়ে পুঁটি এসেছে কিনা। তা দেখতে গদাধর যায়। গাদ এসে খবর দেয়- পিসী তাকে নিয়ে গেছে এবার ভক্ত যায়।

 

দ্বিতীয়াঙ্ক, দ্বিতীয় গর্ভাঙ্ক:

এক উদ্যানের মধ্যে এক ভগ্ন শিবের মন্দিরে বাচস্পতি ও হানিফ ভক্তপ্রসাদ বাবু সহ অন্যদের জন্য অপেক্ষায় আছে। যাতে লুকিয়ে তাদের অপকর্ম ধরতে পারে। একটি গাছের উপরে উঠে বসে থাকে তারা দু'জন। পুঁটি ফাতেমাকে নিয়ে শিব মন্দিরের নিকট এসে অপেক্ষা করছে ভক্তপ্রসাদ বাবুর জন্য। কিছুক্ষণ পর ভক্তপ্রসাদ বাবু ও গদাধর আসে। ভক্তপ্রসাদ বাবুকে পাহাড়া দেয় গদাধর। এদিকে ভক্তপ্রসাদ কথা বলে ফাতেমার মনোরঞ্জন করতে ব্যকুল। নেপথ্যে শোনা গেল গম্ভীর ধ্বনি। হানিফ ছদ্মবেশে ভূত সেজে ভক্তপ্রসাদ বাবুকে মারে। বাচস্পতি প্রবেশ করে দেখতে পায় ভক্তপ্রসাদ পরে রয়েছে।

 

চরিত্র সমূহ:

১. ভক্তপ্রসাদ বাবু।

২. পঞ্চানন বাচস্পতি।

৩. আনন্দ বাবু।

৪. গদাধর।

৫. হানিফ গাজি।

৬. রাম।

৭. পুটি।

৮. ফতেমা (হানিফের পত্নী।)

৯. ভগী।

১০. পঞ্চী।

 

উল্লেখযোগ্য চরিত্র বিশ্লেষণ:

ভক্তপ্রসাদ বাবু:

ভূস্বামী, জমিদার ভক্তপ্রসাদ বাবু খাজনা আদায়ে কঠোর। তার বয়সের সঙ্গে অপকর্মের মাত্রাও যেন বেরে চলছিল। একদিকে যেমন খাজনা আদায়ে কোন ছাড় দেয় না অন্যদিকে তার চোখ নারীদের রেহাই দেয় না। তার এই অপকর্মের সঙ্গী গদাধর

গদাধর:

জমিদারের কর্মচারী, ভক্তপ্রসাদ বাবুর প্রতিনিধিত্ব করে৷ যখন প্রসাদে ভক্তপ্রসাদ বাবু থাকে না তখন বিছানায় আরাম-আয়েশ করে, হুক্কা পান করে। ভক্তপ্রসাদ বাবুকে নারীর প্রতি আসক্তি তৈরিতে গদাধর বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।

হানিফ গাজি:

শোষিত বঞ্চিত কৃষকদের প্রতিনিধিত্ব করে হানিফ। পর্যাপ্ত পরিমাণ ফসল ঘরে তুলতে না পারলেও অর্থের বিষয়ে কোন ছাড় নেই। সেই অর্থ দিয়ে ভূস্বামীরা নিজেদের নিন্দনীয় কাজে ব্যয় করে। হানিফ তার স্ত্রী ফতেমার মাধ্যমে ভূস্বামী ভক্তপ্রসাদের অপকর্মের প্রতিশোধ নেয়।

পুঁটি:

বাংলার চিরাচরিত নারী প্রতিনিধি ফতেমার বিপরীতে অবস্থান পুঁটি চরিত্রের। নিজের একজন নারী হয়ে অন্য নারীকে দিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত করে অর্থের জন্য। এটাই তার উপার্জনের একমাত্র উপায়। যখন ভক্তপ্রসাদ ঘোষণা করর সে আর এই ধরণের কাজ করবে না তখন তার মনে হতাশ তৈরি হয়।

 

৪ .নাটক: কৃষ্ণকুমারী।

নাট্যকার: মাইকেল মধুসুধন দত্ত।

সারসংক্ষেপ:

ধনদাস কৃষ্ণার সাথে জগৎসিংহের বিয়ের কথা বলে। রাজা জগৎসিংহ মন্ত্রী নারায়ণ কে বলে পরামর্শ দিতে। সে বলে মরুদেশের রাজা বীরসিংহের সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু সে মারা যাওয়াতে মানসিংহ বিয়ে করতে চায়। রাজা জগৎসিংহ বিয়ের ব্যবস্থা করতে বলে এবং ধনদাসকে অঙ্গুর দেয়।

মদনিকা এসে বিলাসবতীকে বলে "জগৎসিংহ উদয়পুরের কৃষ্ণাকে বিয়ে করবে। বিলাসবতী কান্না করে অতঃপর মদনিকা সখীর ভালোবাসা রক্ষা করার জন্য লেগে পরে। সে বিয়ে ভাঙতে উদয়পুর আসে মদনমোহন নাম ধারণ করে। সে কৃষ্ণার নাম করে মানসিংহকে পত্র দেয়। আর কৃষ্ণাকে বলে সে এসেছে মরুদেশ থেকে।

উদয়পুরে দেখা হয় মদনিকা ও ধনদাসের। তখন ধনদাস মদনিকাকে চিনতে পারে না। মদনিকা এই সুযোগে ধনদাস বলে বিলাসীর কথা সকালকে জানিয়ে দিবে। ধানদাস তার মুখ বন্ধ রাখার জন্য আংটি দেয় মদনিকাকে।

মানসিংহ কৃষ্ণার(মদনিকার চিঠি) চিঠি পেয়ে উদয়পুর দূত পাঠায়। রাজা মানসিংহ ও জগৎসিংহ উভয় কৃষ্ণাতে বিয়ে করতে দূত পাঠিয়েছেন। মহারাষ্ট্রের রাজা চান কৃষ্ণার বিয়ে যেন মানসিংহের সাথে হয়। তা না হলে তিনি উদয়পুরে আক্রমণ করবে। এমন পরিস্থিতিতে ভীমসিংহ ধনদাসকে ফিরিয়ে দিলেন। সাথে তাকে আংটি উপহার দিল। ধনদাস খুশি।

ধনদাসকে ফিরিয়ে দেয়ায় জগৎসিংহ সিদ্ধান্ত নিলেন মানসিংহকে দমন করবে। মদনিকা উদয়পুর থেকে এসে সব ঘটনা বিলাসবতীকে বলে। মদনিকা ধর্মদাসকে শাস্তি দেয়ার ফন্দি করে। ধনদাস বিলাসীকে নিয়ে পালানোর কথা বলে রাজা সে কথা আড়ালে দারিয়ে শুনতে পায়। রাজা ধনদাসকে হত্যা করতে চায়। কিন্তু বিলাসবতী তাকে থামিয়ে দেয়। রাজা ধনদাসকে রাজ্য থেকে বিতারিত করে। মদনিকা ধনদাসের কাছে গিয়ে সেই আংটি দেয়। ধনদাস বুঝতে পারে মদনিকা তার থেকে ছদ্মবেসে আংটি নেয়।

এদিকে রাজা মানসিংহ বলছে হয় সে কৃষ্ণাকে বিয়ে করবে নতুবা উদয়পুর আক্রমন করবে। জগৎসিংহ একই পন করে। এমন খবর শুনে উদয়পুরের রাজা চিন্তিত। এমন সময় নাম ঠিকানাহীন একটি চিঠি আসে উদয়পুরের রাজ দরবারে যাতে লেখা ছিল-

সমস্যা সমাধানের উপায় কৃষ্ণার মৃত্যু।"

রাজা ভীমসিংহ মন্ত্রীর নিকট পরামর্শ চাইললে তখন মন্ত্রী বলে, প্রজাদের প্রাণ রক্ষার জন্য একজনের প্রাণনাশ হতে পারে। কয়েকদিন মন্দিরে থাকে রাজা ভীমসিংহ, অতঃপর চিন্তাভাবনার পর কৃষ্ণাকে হত্যার জন্য ছোটভাই বলেন্দ্রসিংহকে নিয়োগ করে। কিন্তু বলেন্দ্র সিংহ এমন কাজ করতে না করে। তবে মন্ত্রী নানান যুক্তি দেখিয়ে তাকে রাজি করায়।

বলেন্দ্র সিংহ গেল ঘুমন্ত কৃষ্ণাকে হত্যা করতে। যখন ছুরি উঠালো তখন কৃষ্ণা জেগে যায়। সে তার চাচার কাছে হত্যার কারন জানতে চায়। তখন বলেন্দ্র সিংহ বলে মানসিংহ ও জগৎ সিংহ প্রতিজ্ঞা করেছে হয় কৃষ্ণাকে বিয়ে করবে নয়তো উদয়পুর ধ্বংস করবে। এমন সময় রাজা ভীমসিংহ একক্ষে প্রবেশ করে। কৃষ্ণার চিন্তায় সে মস্তিষ্ক বিকৃত হয়েছে। কৃষ্ণা তার বাবা ও চাচার চরণধুলি নিয়ে আত্মহত্যা করে। কৃষ্ণার মা অহল্যাদেবী আসে। কৃষ্ণাকে বুকে জরিয়ে ধরে। কৃষ্ণার মৃত্যুর পর অহল্যাদেবী আত্মহত্যা করে। রাজা ভীমসিংহ মানসিক ভারসাম্য হারালেন।

 

চরিত্র সমূহ:

উদয়পুর রাজ্য

১. ভীমসিসহ(রাজা।)

২. অহল্যাদেবী(রাজার স্ত্রী।)

৩. কৃষ্ণা(উদয়পুর রাজকন্যা।)

৪. বলেন্দ্র সিংহ(রাজার ছোট ভাই।)

৫. সত্যদাস(মাস্ত্রী।)

৬. রাণীর সহচর: ভগবতি তপম্বিনী।

জয়পুর রাজ্য

৭. জগৎসিংহ (জয়পুর রাজ্যের রাজা। যে কৃষ্ণাকে বিয়ে করতে চায়)

৮. ধনদাস(রাজার সহকারী।)

৯. বিলাসবতী (রাজার প্রেমে পরে।)

১০. মদনিকা (কৃষ্ণা ও জগৎসিংহের বিয়ে ভাঙ্গতে মদনমোহন নাম ধারন করে।)

১১. নারায়ণ মিশ্র(মন্ত্রী।)

মরুদেশীয় রাজ্যের চরিত্র:

১২. মানসিংহ( রাজা। কৃষ্ণাকে বিয়ে করতে চায়। ২টি কারণে- ১. কৃষ্ণার পত্র (যা মদনিকার লেখা। ও ২. পূর্বের রাজার সাথে বিয়ের কথা ছিল।)

মহারাষ্ট্রের চরিত্র নাটকে দেখা যাবে না। তবে নাম ব্যবহার হয়।

 

উল্লেখযোগ্য চরিত্র বিশ্লেষণ:

ভীমসিংহ:

উদয়পুর রাজ্যের রাজা। তারা স্ত্রীর নাম অহল্যাদেবী। তাদের একমাত্র কন্যা কৃষ্ণা। রাজা তার রাজ্য রক্ষার জন্য নিজের একমাত্র কন্যা কৃষ্ণাকে হত্যার জন্য ছোটভাই বলেন্দ্রসিংহকে বলে। রাজ্যের সুবিধার জন্য বা রাজ্য রক্ষার জন্য নিজের মেয়েকে বিসর্জন দেয়। পরে অবশ্য মেয়ের শোকে নিজে ভবঘুরে বনে যায়।

কৃষ্ণকুমারী:

উদয়পুর রাজ্যের একমাত্র রাজকন্যা কৃষ্ণা। কৃষ্ণকুমারী নাটকের নাম চরিত্র। তার বিয়ে কেন্দ্র করে নাট্য কাহিনী, দ্বন্দ্ব এগিয়ে এক ট্রাজেডিময় সমাপ্ত হয় নাটকের। কৃষ্ণকুমারী পিতার অনুগত কন্যা। পিতার কথা মত নিজে আত্মহত্যা করে। কৃষ্ণকুমারী রূপে গুণে অনন্য। তার একটি চিত্রপট দেখে জগৎসিংহ তাকে বিবাহ করার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে।

মদনিকা:

নাটকে কাহিনী প্রবাহিত হয় মদনিকা এবং ধনদাস চরিত্রের মাধ্যমে। নাটকের মদনিকা চরিত্র হল বিলাসবতীর সখী। ধনদাস হল জগৎসিংহের নারী সংগ্রহকা। মদনিকা কৃষ্ণা ও জগৎসিংহের বিয়ে ভাঙ্গতে উদয়পুর রাজ্যে আসে। সে এখানে ছদ্মবেশ ধারণ করে। তখন তার নাম হয় মদনমোহন।

ধনদাস:

ধনদাসের মাধ্যমে ভীমসিংহের কাছে রাজা জগৎসিংহ কৃষ্ণার বিবাহের খবর পাঠান। ধনদাস এই নাটকে একটি হীন চরিত্র সে টাকার জন্য সব করতে পারে।

 

 

৫. নাটক: বিসর্জন।

নাট্যকার: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন     ৭ মে ১৮৬১ সালে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য কর্মের মধ্যে রয়েছে ৩৮টি নাটক। তিনি নিজে অভিনয় করতেন। এর আগে বাংলা নাটকের নব্য ধারা প্রতিষ্ঠায় তার পরিবারের ছিল বিশেষ অবদান। ৮০ বছর বয়সে ৭ আগস্ট ১৯৪১ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

সারসংক্ষেপ:

ত্রিপুরা রাজ্যের রাজা গোবিন্দমাণিক্য, রাণী গুণবতী। যারা ছিলেন নিঃসন্তান দম্পতি। রাণী গুণবতী তার প্রাণের ভিতরে আরো একটি প্রাণ অনুভব করে। রাণী সন্তানের আশায় দেব মন্দিরে আসেন। পুরোহিত কথা দিয়েছে এবার তার নামে মা কালীর পূজা হবে। অবশ্য এজন্য ১০০ মহিষ ও ৩০০ ছাগল বলি দিতে হবে। দেবী সন্তুষ্ট হলে রাণীর মনোবাসনা পূর্ণ হবে। এরই মধ্যে রাজ অনুচরদ্বয় ভিখারিনী অপর্ণার সন্তানতূল্য ছাগল ধরে এনে বলি দেয়া হলে অপর্ণা রাজার কাছে এধরনের অন্যায় অচ্যাচেরের বিচার চায়। অপর্ণা রাজার কাছে কৈফিয়ত চাইতে আসলে তা গৃহিত হয়। রাজা বলেন,

"আমার ত্রিপুরা রাজ্যেকে করিবে জীব হত্যা জীব জননীর পূজাচ্ছলে, তারে দিব নির্বাসন দন্ড।"

রাজার এ দণ্ডাদেশ পুরোহিতের ব্যক্তিত্বে আঘাত হানে। পুরোহিত বলিদানে হত্যাকে হত্যা মনে করেন না। ফলে রাজা ও পুরোহিতের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। রাজার ঘোষণা শুনে রাণী সহ সকলে রাজার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে রঘুপতি তার প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠায় সংকল্প বদ্ধ। তার এই কার্য সম্পাদনে নানা ষড়যন্ত্র ও কৌশলের আশ্রয় নেয়। রাজা বলে বালিকা রূপে বিশমাতা তাকে জানিয়েছে রক্ত সয্য হয় না। রাজার কথা পুরোহিত রঘুপতি বিশ্বাস না করে উপহাস করে। সে রাজাকে বলে এমন কিছু ঘটলে তারই আগে জানার কথা। রাজা বলিদান প্রথা নিষিদ্ধ করে দেয়।

এদিকে পুরোহিত রাজার ভাই নক্ষত্ররায়কে বলে, কাল রাতে স্বপ্ন দিয়েছেন দেবী, তুমি রাজা হবে। রাজার ভাই নক্ষত্ররায় বলে, "আমি হব রাজা? হা হা হা বলো কি ঠাকুর। রাজা হব? একথা নতুন শোনা গেল!" পুরোহিত বলে দেবীকে রাজরক্ত এনে দিতে হবে। অর্থাৎ রাজার ভাই নক্ষত্ররায়কে রাজা হবার লোভ দেখিয়ে রাজা গোবিন্দমাণিক্যকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে।

নক্ষত্ররায় রাজা গোবিন্দমাণিক্য'র কথা শুনে ভ্রাতৃস্নেহে বাঁধা পরে। নক্ষত্ররায় নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চায়। গোবিন্দমাণিক্য তাকে ক্ষমা করে দিলে পুরোহিত রঘুপতির ষড়যন্ত্রের কথা জানিয়ে দেয়। তবে রাণীর সন্তান কামনা করাতে রাজার বিপক্ষে চলে যায়। রাণী রাজার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। সে নক্ষত্ররায়কে বলে রাজাকে হত্যা করতে। "যে চোর করিয়াছে চুরি তোমারি মুকুট তাহারে সরায়ে দেও।" ভ্রাতৃস্নেহের জন্য নক্ষত্ররায় রাজাকে হত্যা করতে পারবে না। তখন পালক পুত্র ধ্রুবকে হত্যার কথা বলে। রাণী নিঃসন্তান হওয়াতে পালক পুত্র ধ্রুবর কার্যকলাপ তার ভালো লাগে না। পালক পুত্র ধ্রুব ভবিষ্যতে রাজা হবে ভেবে রাজার ভাই নক্ষত্ররায় ধ্রুবকে হত্যা করতে রাজি হয়। নক্ষত্ররায় ধ্রুবকে হত্যার জন্য নিয়ে গেলে সে সফল হয় না কারণ সেখানে রাজা চলে আসে। রাজার ভাই নক্ষত্ররায় ও মন্দিরের পুরোহিত রঘুপতি দু'জনকে বন্দী করা হয়।

রাজা তাদের ৮ বছরের নির্বাসন দন্ড দেয়। শ্রাবণের শেষ রাতে পূজা অর্চনা করার দুই দিনের সময় পায় রঘুপতি। তবে উক্ত দুইদিনের মধযে সে ষড়যন্ত্র করে যায়। সে তার পালক পুত্র জয়সিংহ করে রাজাকে হত্যা করতে প্রতিজ্ঞা বদ্ধ করায়। রঘুপতির পালিত পুত্র জয়সিংহের শরীরে বহন করছে রাজরক্তধারা।

রাজা গোবিন্দমাণিক্যের মানবিকতা ও মাহাত্ম্য জয়সিংহকে অধিক আকর্ষণ করেছে। এমন মানবিক রাজাকে সে মারতে পারবে না তাই সে খালি হাতে ফিরে আসে। অন্যদিকে সে রঘুপতিকে কথা দিয়েছে রাজরক্ত এনে দিবে। অতঃপর সে নিজ বক্ষে ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যা করে দেবীর সামনে। রঘুপতি এবার নিজের অবস্থা বুঝে হিংসা অহংকার শেষ হয়ে যায়। ছোটবেলা থেকে যাকে কোলে পিঠে মানুষ করেছে এত আদরে। সেই জয়সিংহ আজ তার কারণে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। জয়সিংহের আত্মদান রঘুপতিকে নারকীয় হত্যাযোগ্য অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসে। সে একদম স্থবির হয়ে যায়। জয়সিংহের মৃত্যুতে রঘুপতির হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। অবশেষে তার কাছে দেবী মিথ্যা। সে বলে, "কোথাও সে নাই। উর্ধ্বে নাই, নিম্নে নাই, কোথাও সে নাই, কোথাও সে ছিল না কখনো।"  হাহাকার করতে করতে রঘুপতি দেবীর পাষাণ মূর্তি গোমতী নদীর জলে বিসর্জন দিয়ে দেয়। অপর্ণা আসলে রঘুপতি অপর্ণার মধ্যে মানবীয় দেবীকে খুঁজে পায়। অন্যদিকে নক্ষত্ররায় মোগলদের সাথে হাত মিলিয়ে রাজাকে সিংহাসনচ্যুত করে। রাজাও নক্ষত্ররায়কে সিংহাসন দিয়ে, রাজ্যপাঠ দিয়ে নির্বাসনে যেতে চায়। অন্যদিকে রাণী গুণবতীর চেতনা ফিরে আসে। সে রাজার কাছে এসে তার সঙ্গে নির্বাসনে যেতে চায়। তবে নির্বাসনে যাওয়ার আগে একবার পূজা করে নিতে চায়। পূজা করে সে সীতার মত নির্বাসনে চলে যাবে। রাজাও খুশি হয়ে যায়। রাণীর এ পরিবর্তনে রাজা বলে, "আজ শুভদিন মোর। রাজ্য গেল, তোমারে পেলাম ফিরে।"

পরে তারা মন্দিরে গিয়ে দেখতে পায় দেবী নেই। রঘুপতি ততক্ষণে অপর্ণার হাত ধরে মন্দির ত্যাগ করে চলে গেছে। রাণী রাজাকে উদ্দেশ্য করে বলে, "আজ দেবী নাই, তুমি মোর একমাত্র রয়েছ দেবতা। জয়সিংহের আত্মবিসর্জনের পর সম্পূর্ণ ঘটনা অন্যরকম হয়ে যায়। আর এক ধরণের ট্রাজেডির সৃষ্টি হয় যার দরুণ জয়সিংহ এই নাটকের প্রধান চরিত্র।

 

নাটকের চরিত্র সমূহ:

১. গোবিন্দমাণিক্য(ত্রিপুরার রাজা)

২. নক্ষত্ররায়(গোবিন্দমাণিক্যের কনিষ্ট ভ্রাতা)

৩. রঘুপতি(রাজপুরোহিত)

৪. জয়সিংহ(রঘুপতির পালিত রাজপুত যুবক, রাজমন্দিরের সেবক)

৫. চাঁদপাল(দেওয়ান)

৬. নয়নরায়(সেনাপতি)

৭. ধ্রুব(রাজপালিত বালক)

৮. মন্ত্রী

৯. পৌরগণ

১০. গুণবতী(রাণী)

১১. অপর্ণা(ভিখারিনী)

 

উল্লেখযোগ্য চরিত্র বিশ্লেষণ:

গোবিন্দমাণিক্য:

ত্রিপুরা রাজ্যের রাজা গোবিন্দমাণিক্য। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। রাজা গোবিন্দমাণিক্য হৃদয়বান ও কোমল মনের মানুষ। তার প্রাসাদে কর্মচারী থেকে শুরু করে স্বর্ণমুদ্রা থাকলেও নেই তার সন্তান। রাজা জীব হত্যা বন্ধ করে দেয়। অপর্ণা রাজার কাছে কৈফিয়ত চাইতে আসলে তা গৃহিত হয়। রাজার মানবিক দিক বা প্রজাদের প্রতি তার দায়িত্ব দৃশ্যমান।

জয়সিংহ:

রঘুপতির পালিত রাজপুত যুবক এবং রাজমন্দিরের সেবক। নিজরে জীবন দিয়ে তার পালক পিতা রঘুপতিকে বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রাণের মূল্য। বিসর্জন নাটকের স্বার্থকতা পায় জয়সিংহ চরিত্রে। একদিকে পিতার আদেশ। অন্যদিকে রাজার প্রাণ রক্ষা করা। এই দুই দায়িত্ব নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের সমাধান করল নিজেকে বিলীন করে।

রঘুপতি:

রাজপুরোহিত। এ সমাজ ধর্মব্যবসায়ীদের, এ সমাজ রঘুপতি। মন্দিরের রাজ পুরোহিত রঘুপতি যুগ যুগ ধরে ত্রিপুরা রাজ্যের রাজ পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করে আসছে। রঘুপতি গুরুত্বপূর্ণ ও অপ্রতিরোধ্য চরিত্র। যে কিনা নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী পুরাণের কথা বলেন। রঘুপতি নিজের ক্রোধের জন্য রাজাকে হত্যার জন্য প্রথমে রাজার ভাই ও পরে নিজের পালক পুত্রকে দিয়ে ষড়যন্ত্র করায়। সমাজে মান্যবর অবস্থানে থাকলেও রঘুপতি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে নেতিবাচক চরিত্রে রুপান্তরিত হয়েছে।

নক্ষত্ররায়:

গোবিন্দমাণিক্যের কনিষ্ট ভ্রাতা। নক্ষত্ররায় ছিল- ভীরু, দুর্বল, অকৃতজ্ঞ এবং ব্যক্তিত্বহীন। তাই রাজপুরোহিত দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিল। এমনকি লোভে পরে নিজের ভাইকে হত্যার জন্যও রাজি হয়ে যায়। অবশ্য তার ভাই অর্থাৎ রাজা গোবিন্দমাণিক্য তাকে জিজ্ঞেস করে সে তাকে হত্যা করতে চায় কিনা? এক অন্ন খেয়ে করে বড় হয়েছি। নক্ষত্ররায় রাজা গোবিন্দমাণিক্য'র কথা শুনে ভ্রাতৃস্নেহে বাঁধা পরে। স্বার্থের জন্য মানুষের আজন্মের বন্ধন ছিন্ন হলো। নক্ষত্ররায় রাজপালিত বালক ধ্রুবকে হত্যা করতে চেষ্টা করে। শেষদিকে নক্ষত্ররায় মোগলদের সাথে হাত মিলিয়ে রাজাকে সিংহাসনচ্যুত করে।

 

 

 

 

৬. নাটক: ডাকঘর।

নাট্যকার: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

সারসংক্ষেপ:

অমল কিশোর ছেলে তার বাবা-মা মারা গেছে। নিঃসন্তান মাধবদও অমলকে নিজবাড়িতে রেখেছে। এমনকি অসুস্থ অমলের জন্য তার সঞ্চিত টাকা খরচ করতে দ্বিধাবোধ করে না। অমল অসুস্থ। কবিরাজ বলেছে ঘরের বাহিরে যাওয়া বারণ। বাহিরে গেলে অসুখ হবে। অমল ফকিরের মত ভিক্ষা করতে হবে চায় পাহাড় দেখার জন্য। অমলের পিসে মশায়, তার বেশ যন্ত্র করে ঠিক যেমন বলেছে কাবিরাজ। দইওয়ালার মত অমল গ্রামে গ্রামে সুরতে চায়। দইওয়ালা অমলের সাথে কথা বলে নিজ কর্মের আনন্দ সুজে পায়। রাজার ডাকঘর থেকে অমলের নিকট চিঠি আসবে প্রহরীর এমন কথায় অমল আকুল হয়। এ জন্য মোড়লকে বলে তার নাম যা ডাকঘরে বলে দিতে বলে। মোড়ল- উপহাস করে অমলের কথা শুনে। ছেলেদেরও বলে ডাকঘরে তার নাম বলতে। অমল প্রতিনিয়ত রাজার চিঠির জন্য ব্যকুল হয়। মোড়ল অমলের চিঠি প্রাপ্তির বিষয় ব্যঙ্গ করে একটি কাগজ নিয়ে আসে রাজার চিঠি হিসেবে। কিন্তু পরক্ষণে রাজবাবিরাজের আগমন। রাজকবিরাজ এসে শয্যাগত অমলের জন্য মুক্তির আলোকবর্তিকা নিয়ে আসে। সকল দরজা জানালা গুলতে বলা হয়। অমল মুক্তিপেয়ে যায় প্রাণ ত্যাগের মাধ্যমে।

ডাকঘর নাটকের অমল আসলে রবীন্দ্রনাসের প্রতিরূপ। অমল বন্দি থেকে পুঁথি পড়ে পন্ডিত হতে চায় না। সে দইওয়ালার মত গ্রামে গঞ্জে পাহারে ঘুরে বেরাতে চায়।

অমল ঠাকুরদাকে বলে-

"আজ অকালবেলা হইতে থেকেই আমার চোখের উপর থেকে অন্ধকার হয়ে আসছে। কথা কইতে আর ইচ্ছা করছে না।"

এই সংলাপ থেকে অনুমেয় যে অমলের শরীর খারাপ।

কবিরাজ ও রাজকবিরাজের কথার ভিন্নতা অমলের চিকিৎসার ঘাটটি স্বরুপ।

ঠাকুরদা, রাজকবিরাজ সামাজিক বিধিনিষেধের বাহিরে ব্যাপক ক্ষেত্রে এরা অবস্থান করে। এরা অমলকে বোঝে। ডাকঘর নাটক রচনা কালে নাট্যকারের নিজের মৃত্যু ভাবনা ছিল বিধায় অমলের চারিত্রিক পরিনতি এমন। বেদনার পাশাপাশি পার্থিব জগতের প্রতি প্রবল আপত্তি প্রকাশ পেয়েছে নাটকে। জীবন ও জগৎকে আরো ভালো করে জানার আগ্রহ তৈরি হয় ডাকঘর নাটক পাঠে।

রাজার চিঠি পাবার জন্য ব্যাকুল অমল। এই রাজা পরমাত্মা। রাজা অমলকে কবে ডেকে নিবে তার জন্য সে ব্যাকুল। মানে জীবনাত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলনের বাসনা।

 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত "ডাকঘর' নাটকের চরিত্র সমূহঃ-

১. মাধব দত্ত

২. কবিরাজ

৩. ঠাকুরদা (ফকির)

৪. অমল গুপ্ত

৫. দইওয়ালা

৬. প্রহরী

৭. মোড়ল

৮. সুধা (বালিকা)

৯. ছেলেরা।

১০. রাজদূত

১১. রাজকবিরাজ

 

উল্লেখযোগ্য চরিত্র বিশ্লেষণ:

অমল:

নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র অমল রুগ্ন অবস্থায় গৃহে অন্তরিন। পৃথিবীর সৌন্দর্য অমলকে পেতে চায়। তাই গৃহের বাহিরের সীমাহীন সৌন্দর্য অমলকে আহ্বান করে। অবশ্য এই আহ্বান কেবল অমন শোনে বহু পুঁথি পড়া কবিরাজ শোনে না। বালক অমল মুক্তির প্রতিক্ষায় থাকে। ডাকঘর নাটকের শেষে অমলের মুক্তি মেলে। অমল মাধব দত্তের স্ত্রীর গ্রাম সম্পর্কের ভাইয়ের ছেলে। ছোটবেলায় মা মারা যায়। পরে বাবাও মারা গেলে মাধব দও তাকে আনে।

মাধব দত্ত:

ডাকঘর নাটকের অন্যতম চরিত্র মাধব দত্ত। সম্পর্কে অমলের পিসে মশাই। মাধব দত্তের কোন সন্তান নেই। তাই সে আগে টাকা রোজগার করত নেশার মত। তার অর্থ উপার্জনের কোন সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু অমল আসার পর মাধব দও অমলের জন্য উপার্জন করছে বিধায় উপার্জনে ভারি আনন্দ পাচ্ছে। মাধব দত্ত বেশ কর্তব্য পরায়ণ। কেননা সে কবিরাজের কথা মত অমলত নির্দেশ দেয়।

সুধা:

অমল জানালা থেকে সবার সাথে কথা বলে, পরিচিত হয়। তেমন একদিন এক বালিকার সাথে দেখা অমলের।  শশী মালিনীর মেয়ে সুধা অমলকে বলে সে ঘরে বসে থাকলে তার মজা হতো। অন্যদিকে অমলের অনন্দ মুক্তিতে। সুধা অমলকে দেখা কথা রেখেছে। অমলের জন্য ফুল নিয়ে এসেছে। কিন্তু চিরনিদ্রায় অমল।

মোড়ল:

ডাকঘর নাটকের নেতিবাচক চরিত্র মোড়ল। বালক আমলের কর্মকান্ডে সে বিদ্রূপ মনোভাব পোশন করে। এমনকি মাধব দত্তের অর্থের বিষয়েও সে হস্তক্ষেপ করে। মোড়ল প্রভাব প্রতিপত্তি ব্যবহার করে প্রজাদের তার অধীনস্থ করে রাখতে উৎসুখ।

ঠাকুরদা (ফকির):

সকল শিশুদের সাথে মিশে। তাদের সঙ্গে গল্প করে। অর্থাৎ বালত-বালিকাদের নব্য চিন্তাধারা বিকাশে সহায়ক ভুমিকা পালন করে ঠাকুরদা (ফকির)।

 

৭. নাটক: রক্তকরবী।

নাট্যকার: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

সারসংক্ষেপ:

যক্ষপুরীর রাজার রাজধর্ম প্রজাশোষণ; তার অর্থলোভ দুর্দম। তার সে লোভের আগুনে পুড়ে মরে সোনার খনির কুলিরা। রাজার দৃষ্টিতে কুলিরা মানুষ নয় তারা স্বর্ণলাভের যন্ত্রমাত্র, তারা ৪৭ক, ২৬৯ফ মাত্র, তারা যন্ত্রকাঠামোর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঙ্গ মাত্র, মানুষ হিসেবে তাদের কোনো মূল্য নেই। সাধারণত জীবনের প্রকাশের সম্পূর্ণরূপ- প্রেম ও সৌন্দর্য, নন্দিনী তার প্রতীক। রক্তকরবী নাটকে মনুষ্যত্ব, মানবতা এ যন্ত্রবন্ধনে পীড়িত ও অবমানিত। জীবনের প্রকাশ যক্ষপুরীতে নেই। নন্দিনীর আনন্দস্পর্শ যক্ষপুরীর রাজা পাননি তাঁর লোভের মোহে, পন্ডিত পায়নি দাসত্বের মোহে, সন্ন্যাসী পাননি তাঁর ধর্মসংস্কারের মোহে, মজুররা পায়নি অত্যাচার ও অবিচারের লোহার শিকলে বাঁধা পড়ে। যক্ষপুরীর লোহার জালের বাইরে প্রেম ও সৌন্দর্যের প্রতীক নন্দিনী সবাইকে হাতছানি দিয়ে ডাকল; এক মুহূর্তে মুক্ত জীবনানন্দের স্পর্শে সবাই চঞ্চল হয়ে উঠল। রাজা নন্দিনীকে পেতে চাইলেন যেমন করে তিনি সোনা আহরণ করেন, শক্তির বলে কেড়ে নিয়ে। কিন্তু প্রেম ও সৌন্দর্যকে এভাবে লাভ করা যায় না। তাই রাজা নন্দিনীকে পেয়েও পাননি। একইভাবে মোড়ল, পন্ডিত, কিশোর, কেনারাম সবাই প্রাণপ্রাচুর্যের মধ্যে বাঁচার জন্য ব্যাকুল হয়ে জালের বাইরের দিকে হাত বাড়াল। কিন্তু নন্দিনী রঞ্জনকে ভালোবাসে তাই তার মধ্যে প্রেম জাগিয়ে তুলেছে। কিন্তু রঞ্জন যন্ত্রের বন্ধনে বাধা। এ যন্ত্র তার প্রেমকে জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিল-এটাই যান্ত্রিকতার ধর্ম এবং কবি তা বিশ্বাস করেন। নন্দিনীর প্রেমাস্পদ যান্ত্রিকতার যুপকাষ্ঠে নিঃশেষিত হলো এবং আবার যেন প্রেমকে ফিরে পাওয়া যায় সে লক্ষ্যে জীবন জয়ী হলো। নাট্যকার নাটকটিতে জড় যান্ত্রিকতা ও জীবনধর্মের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য সন্ধান করেছেন।

 

চরিত্র সমূহ:

১. নন্দিনী

২. কিশোর

৩. অধ্যাপক

৪. রাজা(নেপথ্যে)

৫. ফাগুলাল(খোদাইকর)

৬. চন্দ্রা(ফাগুলালের স্ত্রী)

৭. বিশু।

৮. গোকুল(খোদাইকর)

৯. সর্দার।

১০. গোঁসাই।

১১. ছোট সর্দার।

১২. পুরাণবাগীশ।

১৩. পালোয়ান।

১৪. মেজো সর্দার।

১৫. রঞ্জন।

 

উল্লেখযোগ্য চরিত্র বিশ্লেষণ:

নন্দিনী:

যক্ষপুরীতে প্রেমের প্রতিক নন্দিনী। যান্ত্রিক আবরণে জীবনের বিচিত্র দৃশ্যের এক চরম দৃষ্টান্ত। যখন রাজা নিজেকে মনুষ্যত্বের অংশীদার মনে করে না তখন রাজাকে জালের আড়াল থেকে বের করে প্রাণ ধর্মের গান শুনতে বলে নন্দিনী। নন্দিনী যক্ষপুরের আচমকা আলো।

রাজা:

নাটকের বেশ কিছু দৃশ্যের রাজার উপস্তিতি মঞ্চে থাকে না। নেপথ্যে রাজা নিজের অস্তিত্ব জানান দেয়। যখন নন্দিনী পৌষের গান শুনতে পায় তখন রাজা বলে- তার কাছে সহজ কাজ শক্ত। যক্ষপুরীতে যারা আছে সকলকে যন্ত্রের ন্যায় মনে করে।

অধ্যাপক:

রাজার অনুগত পণ্ডিত। তার সংলাপে বলে- সেও আছে জালের আড়ালে। যক্ষপুরীর রাজা যেমন ভয়ংকর, অধ্যাপকও তেমন ভয়ংকর পণ্ডিত। ক্ষণে ক্ষণে নন্দিনীর প্রতি তার প্রেম যক্ষপুরী ভুলিয়ে দেয় আবার রাজার প্রতি তার আনুগত্য সেই পথ থেকে দূরে রাখে।

সর্দার:

নাটকের সর্দার প্রতিনিধি সকল কার্যে নিজেদের মতানুসারে নির্দেশনা করে। অবশ্য রাজার কাছে তারাও যান্ত্রিক। তিনজন সর্দার পাওয়া যায় নাটকে- ছোট সর্দার, মোজো সর্দার, সর্দার।

 

 

 

 

৮. নাটক: নবান্ন।

নাট্যকার: বিজন ভট্টাচার্য।

বিজন ভট্টাচার্য ফরিদপুরে ১৭ জুলাই ১৯০৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ভারতীয় গণনাট্য সংঘ বা ইণ্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েসন যা আইপিটিএ নামে বেশি পরিচিত সেই সংগঠনে বিজন ভট্টাচার্য ছিলেন প্রথম সারির নাট্যকর্মী। তিনি নাটক রচনা, অভিনয় এবং নির্দেশনায় সাফল্য লাভ করেছিল এই গণনাট্য আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। শ্রেষ্ঠতম রচনা নবান্ন নাটক। ৭১ বছর বয়সে ১৯ জানুয়ারি ১৯৭৮ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

সারসংক্ষেপ:

রাতের অন্ধকারে মালভূমির মত উঁচু জায়গায় কতকগুলি ছায়ামূর্তির আনাগোনা। আগুনের আভা, বাইরে বাঁশের গাঁট ফাটার মধ্য দিয়ে মেসিনগানের আওয়াজ। আগষ্ট আন্দোলনের পটভূমিতে গাঁয়ের মধ্যে একটি সদা সন্ত্রস্তভাব বিরাজ করছে। বৃদ্ধ প্রধান সমাদ্দার আগষ্ট আন্দোলনের কর্মী তাঁর দুই ছেলেকে হারিয়ে বিলাপ করে। তার স্ত্রী পঞ্চাননীও মেয়েদের ইজ্জৎ নষ্ট হচ্ছে দেখে এবং স্বদেশের টানে নিজে আন্দোলনে যোগ দিয়ে, পিছিয়ে পড়া কর্মীদের উদ্দেশ্যে এগিয়ে যাওয়ার আবেদন জানায়। পথেই পুলিশের গুলিতে সে মৃত্যু বরণ করে।

দ্বিতীয় দৃশ্যে কুঞ্জ, প্রধান, নিরঞ্জনের সঙ্গে রাধিকা, বিনোদিনীর পারস্পারিক সংলাপের মধ্য দিয়ে বর্তমান সংকটের দিনে অভাবী সংসারের সরল মানুষগুলির পারস্পরিক কলহ উত্তাপের ছবি ফুটে উঠেছে। সংসারের ভার বহনে যখন পুরুষরা অসহায় ও হীনমন্যতায় ভুগছে তখন নারীদের অসহায়তা ও সেইসঙ্গে অসহিষ্ণুতা বোধ আরও বেশি হবে, এতে বিস্ময়ের কিছু নেই সে পরিচয় পাওয়া যায় কুঞ্জ রাধিকা ও নিরঞ্জন-বিনোদিনীর সংলাপে।

তৃতীয় দৃশ্যে সংকটের আরও ঘনীভূত রূপ দেখা যায় প্রধানের জমি বিক্রি করবার উদ্যোগের মধ্যে অন্নাভাবগ্রস্ত মানুষের এই দুর্দশার সুযোগ নেয়, হারাধনের মত পোদ্দাররা। অপর কৃষক দয়াল এ-ভাবেই সব হারিয়েছে, এমন কি বীজধান পর্যন্ত। অবশেষে তাকে প্রতিবেশী সমাদ্দার বাড়ি চালের সন্ধানে যেতে হয়েছে। স্ত্রী রাঙার মা "ধুঁকছে কাল বিকেল থেকে"। এই দৃশ্যেরই শেষে আকস্মিকভাবে ঝড় ওঠে, সাইক্লোনে প্রধানের দোচালা বিনোদিনীর মাথার ওপর ভেঙে পড়ে-সে অচৈতন্য হয়ে যায়। ওদিকে বন্যায় সব ভেসে যায়। দয়াল বাড়ি গিয়ে দেখে রাঙা, রাঙার মা বন্যায় ভেসে গেছে।

চতুর্থ দৃশ্যে বন্যা ফলে অভাব ও অন্নসংকট দেখা যায়। "নিত্যি ঐ এক ডুমুরের কলা সেদ্ধ, আর কচুর নতির ঝোল'- এর বিরুদ্ধে কুঞ্জের ছেলে মাখন বিদ্রোহ করে।

পঞ্চম দৃশ্যে দেখা যায় হারু দত্তের লোভ প্রধানের জমির জন্য। প্রধান সব বোঝে। তার সঙ্গে জমি বিক্রি নিয়ে কথা হয়। প্রধান রাজি না হওয়ায় সে নতুন ভাবে চাপ দেয়। কুঞ্জ উপলব্ধি করে টাকার লোভ দেখিয়ে লোকজনের থেকে ধানগুলো সব নিয়ে গেছে। এবার জমি নিবে। তাই সে বলতে বলে ”ও জমি বিক্রি হবে না বলে দাও।" হারুর লোকজন কুঞ্জ ও প্রধানকে মারে। মাখন এ দৃশ্য দেখে মাথা ঘুড়ে পড়ে যায়। তার মৃত্যু সমস্ত পরিবারকে বিচলিত করে।

দ্বিতীয় অঙ্কের শুরু শহরে। কোলকাতার চাল ব্যবসায়ী কালীধন ধাড়ার দোকানে নিরঞ্জন রাখহরি নাম নিয়ে মজুরের কাজ করে। হারু দত্ত গ্রাম থেকে চাল ও মেয়েমানুষ সংগ্রহ করে কালীধনকে সরবরাহ করে। অন্যায়ভাবে চড়া দামে চাল বিক্রির প্রতিবাদ করে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলে বশংবদ কর্মচারী ধৃষ্টতা প্রকাশ করে বলে "কত জন ম্যাজিস্ট্রেট এই বাবু ট্যাঁকে রাইখবার পারে তা নি জানো।" এদেরই চক্রান্তে ও রাষ্ট্রশক্তির পৃষ্ঠপোষণায় 'মনুষ্যসৃষ্টি দুর্ভিক্ষ' লক্ষ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়।

অন্য এক দৃশ্যে দেখা যায় সমাদ্দার পরিবার গ্রাম ছেড়ে শহরের পার্কে আশ্রয় নিয়েছে দুমুঠো খাবার আশায়। এরই মধ্যে বিচিত্র ধরনের সুযোগ সন্ধানীরা নানা রূপে ও বেশে জীর্ণশীর্ণ বস্ত্রহীন এই নিরন্ন কঙ্কালসার মানুষগুলোকে নিয়ে নির্লজ্জভাবে নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থ করতে উদ্যোগী হয়। এদের কেউ ফটোগ্রাফার, কেউ বা টাউট। প্রথমোক্তরা প্রধানের ভাষায় 'কঙ্কালের ছবির ব্যবসাদার,' তৃতীয় ও চতুর্থ দৃশ্যে প্রধান, কুঞ্জ, রাধিকা রাজপথের খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। প্রথমোক্ত জন বাড়ি বাড়ি ভিক্ষে করে ক্ষুধার অন্ন জোগাতে পারছে না, আর অপরজন ডাস্টবিনের খাবার নিয়ে কুকুরে-মানুষে লড়াই করছে। এ দৃশ্য বড় মর্মান্তিক। ওদিকে বড়লোকের বাড়ি পানভোজনের সমারোহ, কিন্তু সামান্য উদ্বৃত্তটুকুও দুর্গত মানুষের কল্যাণে দিতে এদের হাত, সরেনা। কালীধনের সেবাশ্রম সেবা-নামের আড়ালে নারীদেহ নিয়ে ব্যবসা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে।

অকস্মাৎ কালীধনের দোকানে দারোগা পুলিশের আবির্ভাব-চালক্রেতা ভদ্রলোক তাদের নিয়ে এসেছেন। নিরঞ্জন ইতোমধ্যে সেবাশ্রমে বিনোদিনীর সাক্ষাৎ পেয়েছে। নিরঞ্জন চালের গুদাম ও সেবাশ্রমের ব্যবসার সব পরিচয় তুলে ধরলে পুলিশ ওদের হাতকড়ি পরিয়ে ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু তাদের উভয়ের দৃষ্টিতে এমন একটি ভাব ধরা পড়ে যে তাদের ছাড়া পেতেও অসুবিধে হবে না।

তৃতীয় অঙ্কে লঙ্গরখানায় ক্ষুধার্ত মানুষের মিছিল। এরই মধ্যে উপস্থিত কুঞ্জ রাধিকা ও অন্যান্য গ্রামের মানুষ। এদের কথাবার্তায় প্লাবনশেষে ফসলের প্রাচর্যের নানা গল্পকথা। একজন বৃদ্ধ ভিখারী শহর জীবনের যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা থেকে সকলকে গ্রামে ফিরে যেতে বলে। কুঞ্জ রাধিকাও পোড়ামাটির শহর ছেড়ে স্বগ্রামে ফিরে যাওয়ার সঙ্কল্প নেয়। তৃতীয় অঙ্কের দ্বিতীয় দৃশ্য চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রধানকে দেখা যায়। এই চিকিৎসা কেন্দ্রে কোন সাধারণ চিকিৎসারও আয়োজন নেই, চিকিৎসার নামে একরকম প্রহসন চলছে। এখানে প্রধানকে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় দেখা যায়।

চতুর্থ অঙ্কের ১ম দৃশ্যের ঘটনাস্থল আমিনপুর। শহর থেকে ঘরে ফিরে আসা মানুষরা নিজ নিজ বাড়িতে উপস্থিত। নিরঞ্জনের উদ্যোগে, দয়ালের পরামর্শে প্রধানের বাড়িতে সকলে সমবেত হয়ে আগামী দিনের সম্ভাব্য সঙ্কট উত্তরণের জন্য পরামর্শে নিযুক্ত। নানা ধরনের কথাবার্তার শেষে সকলে সমবেত ভাবে খাটার সঙ্কল্পে নিজেদের সুখী ভবিষ্যৎ গড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ২য় দৃশ্য- খেটে ফসল তুলে, ঝাড়াই-এরপর ধর্ম গোলায় কুঞ্জ হিসেবের বেশি ধান প্রথম জমা দেয়। ঠিক করে এবার নবান্ন উৎসব ধুমধাম করে করা হবে। সমাদ্দার পরিবারের বারবার মনে পড়ে প্রধানের কথা।

শেষ দৃশ্যে 'নবান্ন' এর উৎসব চলছে। গ্রামের বিস্তীর্ণ প্রান্তরে সকাল সমবেত হয়েছে। চলছে কৃষক রমণীর গান নাচ আর মোরগের লড়াই, গরুর দৌড়-জয় হল ফেকু মিঞার মোরগের আর রহমত উল্লার গরুর। অকস্মাৎ এই আনন্দোৎসবে প্রধানের আবির্ভাব। সে অনেকটা অপ্রকৃতিস্থ হলেও সব বুঝতে পারে। সকলে মিলে জোর প্রতিরোধের সঙ্কল্প নেয়। এখানেই নাটকের সমাপ্তি।

চরিত্র সমূহ:

১. প্রধান সমাদ্দার(আমিনপুরের বৃদ্ধচাষী।)

২. কুঞ্জ সমাদ্দার - প্রধানের ভাইপো

৩. নিরঞ্জন সমাদ্দার - কুঞ্জের সহোদর

৪. মাখন - কুঞ্জর ছেলে

৫. দয়াল মণ্ডল - প্রতিবেশী

৬. হারু দত্ত - স্থানীয় পোদ্দার

৭. কালীধন ধাড়া - চাল ব্যবসায়ী

৮. রাজীব - কালীধনের সরকার

৯. চন্দর - জনৈক চাষী

১০. যুধিষ্ঠির - আন্দোলনকারী

১১. ফটোগ্রাফারদ্বয় - সংবাদপত্রের প্রতিনিধি

১২. প্রথম ভদ্রলোক - চাল খরিদ্দার

১৩. বরকর্তা - বড়কর্তা

১৪. বৃদ্ধ ভিখারি

১৫. ডোম -

১৬. দারোগা -

১৭. ডাক্তার -

১৮. দিগম্বর -

১৯. ফকির -

২০. পঞ্চাননী - প্রধানের স্ত্রী

২১. রাধিকা - কুঞ্জর স্ত্রী

২৩. বিনোদিনী - নিরঞ্জনের স্ত্রী

২৩. খুকির মা -

২৪. হারু দত্তের মা -

২৫. ভিখারিণী -

২৬. বাংলার ম্যাডোনা –

২৭. ভদ্রলোক –

২৮. নির্মলবাবু –

২৯. টাউট –

৩০. ভিখারী –

এছাড়াও রয়েছে- হারু দত্তের শালা, কনেস্টবল, রোগী, ভৃত্য, চন্দরের মেয়ে, বরকত, কৃষক, নিরন্নের দল, জনতা ইত্যাদি চরিত্র।

চরিত্র বিশ্লেষণ:

বাংলা অপেশাদার গণনাট্য আন্দোলনের প্রথম মঞ্চসফল 'নবান্ন' নাটকের ছোট বড় চরিত্র মিলে প্রায় পঁয়তাল্লিশটা চরিত্র। গ্রাম ও শহরের চিত্র, সমাজব্যবস্থার চরম দুরবস্থা, নৈতিক অধঃপতন, অর্থনৈতিক সংকট ইত্যাদি তুলে ধরে একটা প্রতিরোধমূলক মুহূর্ত সৃষ্টি করাতে চরিত্রের সংখ্যাবৃদ্ধি। 'নবান্ন' নাটকে বড় চরিত্রগুলো ক্রমান্বয়ে- প্রধান সমাদ্দার, কুঞ্জ সমাদ্দার, নিরঞ্জন সমাদ্দার, দয়াল মণ্ডল, হারু দত্ত, কালীধন ধাড়া, রাজীব। স্ত্রী চরিত্রগুলি যথাক্রমে রাধিকা, বিনোদিনী, পঞ্চাননী। একটিমাত্র শিশু চরিত্র মাখন। নাটকে উক্ত চরিত্রের ভূমিকাংশ বেশি। এরাই নাটকের প্রধান চালিকাশক্তি। আলোচ্য প্রতিটি চরিত্রের অভিনয় নৈপুণ্য প্রদর্শনের ক্ষেত্র নাটকে সুবিস্তৃত। প্রধান সমাদ্দার, কুঞ্জ ও নিরঞ্জন সমাদ্দার, রাধিকা, বিনোদিনী, পঞ্চাননী এবং মাখন এক পরিবারভুক্ত। অন্যদিকে দয়াল প্রতিবেশী, হারু দত্ত, কালীধন চোরাকারবারী ও চোরাচালানদার। রাজীব কালীধনের সরকার। মূলত এই চরিত্রগুলোকে বিকশিত করবার জন্য, প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য অভিনয় নৈপুণ্য প্রদর্শনের জন্য, পরিণতি প্রদর্শনের জন্য নাটকের অপরাপর চরিত্রগুলো রূপায়িত হয়েছে।

 

পরিশেষে, বাংলা নাটকের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য নাটক মঞ্চায়ন যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি নাটক রচনাও। শুরুর দিকে নাটক বিংবা সাহিত্য রচিত হত পৌরাণিক কাহিনীর উপর ভিত্তি করে কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেই ধারা পরিবর্তিত হয়ে রুপ নেয় চিন্তা শক্তির উপর। বাস্তবতা নির্ভর হতে শুরু করে নাটক। একটা সময় বাস্তবতা পিছনে ফেলে ভবিষ্যৎ বলতে শুরু করে নাটক কিংবা সাহিত্য। নাটক পাঠে ও মঞ্চায়নেই স্বার্থকতা নাট্যকারের। বাংলা নাটক আমাদের চিন্তাজগৎ অধিকার করে বিকশিত হোক!



কৃতজ্ঞতা-








মো. এনামুল হাসান কাওছার স্যার।

(খণ্ডকালীন শিক্ষক, নাট্যকলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। সহ-ব্যবস্থাপক - জনসংযোগ ও যোগাযোগ বিভাগ, সেমস-গ্লোবাল ইউএসএ।)


লেখক:

মুহাম্মদ আল ইমরান।

(শিক্ষার্থী, নাট্যকলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।)

লেখার তারিখ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ।

Comments